Ads Area


দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ || সমাস (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর || Bangla Samas Questions Answers class-10

 (দ্বিতীয় অধ্যায়) সমাস

আলোচ্য পোস্টে বাংলা ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় 'সমাস' থেকে ষাটটি অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর দেওয়া হল, টেস্ট ও ফাইনাল পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই প্রশ্ন ও উত্তর তোমাদের ভালো লাগবে।


দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ || সমাস (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর || Bangla Samas Questions Answers class-10


দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ || সমাস (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর || Bangla Samas Questions Answers class-10

১) 'সমাস' বলতে কী বোঝ? একটি উদাহরণ দাও।  উত্তর: পরস্পর অর্থসম্পর্কযুক্ত দুই বা তার চেয়ে বেশি পদ মিলিত হয়ে যখন একটি নতুন পদ গঠন করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা একটি সম্মিলিত ধারণাকে প্রকাশ করে, তখন তাকে সমাস বলা হয়। যেমন: লোকের আলয় = লোকালয়।

২) 'সমাস' শব্দটি ব্যাকরণগত অর্থ কী?

উত্তর: 'সমাস' শব্দটির ব্যাকরণগত অর্থ সংক্ষিপ্তকরণ।

৩) সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ বলতে কী বোঝ?

 উত্তর: সমাসে একাধিক পদ মিলিত হয়ে যে নতুন পদটি গঠন করে তাকে সমস্ত পদ বা সমাসবদ্ধ পদ বলে। যেমন-'লোকালয়'।

 ৪) ব্যাসবাক্য বলতে কী বোঝ?

উত্তর: যে বাক্য বা বাক্যাংশের সাহায্যে সমস্যমান পদগুলির পারস্পরিক সম্বন্ধটিকে বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়, তাকেই। ব্যাসবাক্য (বা বিগ্রহবাক্য) বলে।

৫) পূর্বপদ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: একাধিক সমস্যমান পদের মধ্যে যেটি প্রথমে থাকে, তাকে বাল পূর্বপদ। যেমন: লোকের আলয়। জল থেকে আতঙ্ক।

৬) পরপদ বা উত্তরপদ বলতে কী বোঝ? 

উত্তর: যে সমস্যমান পদটি পরে বা শেষে বসে তাকে পরপদ (উত্তর পদ) বলা হয়।

৭) দ্বন্দু সমাস বলতে কী বোঝ? একটি উদাহরণ দাও। উত্তর: যে সমাসে দুই বা ততোধিক পদের মিলন হয় এবং প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থ সমাসবদ্ধ (সমস্ত পদে) পদে অক্ষুণ্ণ থাকে, তাকে দ্বন্দু সমাস বলে। যেমন: হাট ও বাজার = হাটবাজার।

৮) সমার্থক বা প্রায় সমার্থক দ্বন্দ্বের দুটি উদাহরণ দাও। উত্তর: চিঠি ও পত্র = চিঠিপত্র, কালি ও কলম =কালিকলম

৯) বিপরীতার্থক দ্বন্দ্বের দুটি উদাহরণ দাও। 

উত্তর: পাপ ও পুণ্য = পাপপুণ্য, চেনা ও অচেনা = চেনা-অচেনা। 

১০) অনুকার শব্দযোগে দ্বন্দ্বের দুটি উদাহরণ দাও। 

উত্তর: বাসন ও কোসন = বাসনকোসন, ছেলে ও পুলে = ছেলে- পুলে, ঝালা ও পালা = ঝালাপালা প্রভৃতি। 

১১) বিকারজাত শব্দযোগ দ্বন্দুের দুটি উদাহরণ দাও। উত্তর: কান্না কাটি = কান্নাকাটি, ফাঁক ও ফোকর = ফাঁকফোকর, ঝাড় ও ফুঁক = ঝাড়ফুঁক প্রভৃতি। 

১২) বহুপদময় দ্বন্দ্বের দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তর: আজ, কাল ও পরশু = আজ-কাল-পরশু; স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল = স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল।

১৩) অলোপ দ্বন্দু বলতে কী বোঝ? একটি উদাহরণ দাও।

উত্তর: কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ পায় না, তখন তাকে অলোপ দ্বন্দু বলা হয়। যেমন-চোখে ও মুখে = চোখেমুখে।

১৪) কর্মধারয় সমাস বলতে কী বোঝ? একটি উদাহরণ দাও। 

উত্তর: যে সমাসে পূর্বপদ পরপদের বিশেষণস্থানীয় হয় এবং পরপদের অর্থই প্রাধান্য লাভ করে তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন-নীল যে অম্বর = নীলাম্বর।

১৫) কর্মধারয় সমাস কয় প্রকার ও কী কী? 

উত্তর: কর্মধারয় সমাসকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়-১) সাধারণ কর্মধারয়, ২) মধ্যপদলোপী কর্মধারয়, ৩) উপমান কর্মধারয়, ৪) উপমিত কর্মধারয়, ৫) রূপক কর্মধারয়।

১৬) সাধারণ কর্মধারয় সমাসের বিশেষণ পূর্বপদ এবং বিশেষ্য পরপদের সমাস হয়েছে এমন একটি দৃষ্টান্ত দাও।

উত্তর: সাধারণ কর্মধারয় সমাসের বিশেষণ পূর্বপদের সঙ্গে পরপদ বিশেষ্য হয়। যেমন: ভরা (বিন) যে সন্ধ্যা (বি) = ভরসন্ধ্যা।

 ১৭) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী ব্যাখ্যামূলক পদটি বা পদগুলি লোপ পায়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন-পল (মাংস) মিশ্রিত অন্ন পলান্ন।

১৮) সংখ্যাবাচক মধ্যপদলোপী সমাসের দুটি উদাহরণ দাও। দ্বি অধিক দশ দ্বাদশ এবং ত্রি অধিক দশ = ত্রয়োদশ। 

১৯) উপমান কর্মধারয় সমাস কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও। 

উত্তর: যে কর্মধারয় সমাসে পূর্বপদে উপমান এবং পরপদে সাধারণ ধর্মবাচক পদটি থাকে আর উপমেয়র কোনো উল্লেখ থাকে না, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: বজ্রের ন্যায় কঠিন = বজ্রকঠিন।

২০) উপমিত কর্মধারয় সমাস কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও। 

উত্তর: যে কর্মধারয় সমাসে পূর্বপদ উপমেয় এবং পরপদ উপমান হয় এবং সাধারণ ধর্মটি উহ্য থাকে, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: নয়ন কমলের ন্যায় = নয়নকমল।

২১) একটি বাক্যে উপমেয়, উপমান, সাদৃশ্যবাচক পদ এবং সাধারণ ধর্মবাচক পদ-এর উদাহরণ দাও। 

উত্তর:  তার চোখটি (উপমেয়) কাজলের (উপমান) মতো (সাদৃশ্য  বাচক পদ) কালো (সাধারণ ধর্ম)। 

২২) রূপক কর্মধারয় সমাস কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে কর্মধারয় সমাসে উপমেয়বাচক পদের সঙ্গে উপমানবাচক পদের অভেদ কল্পনা করা হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় বলে। যেমন: রূপ মাঝি = মনমাঝি।

২৩) রূপক কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্যে উপমেয় ও উপমানের কীভাবে অভেদ কল্পনা করা হয়?

উত্তর: ব্যাসবাক্যে উপমেয় ও উপমানের মধ্যে অভেদ কল্পনাকে পরিস্ফুট করতে অভেদবাচক 'রূপ' পদটি বসে। যেমন: করুণা রূপ সিন্ধু = করুণাসিন্ধু।

২৪) উপমান ও উপমিত কর্মধারয়ের একটি পার্থক্য লেখো।

উত্তর: উপমান কর্মধারয় সমাসে উপমানই প্রধান, উপমেয় উহ্য থাকে। যেমন: কুন্দশুভ্র। অন্যদিকে উপমিত কর্মধারয় সমাসে উপমেয়ই প্রধান এবং উপমান ও উপমেয় ভেদের আভাস থাকে। যেমন: কাচপোকা।

২৫) উপমিত কর্মধারয় এবং রূপক কর্মধারয় সমাসের একটি পার্থক্য লেখো।

উত্তর: উপমিত কর্মধারয় সমাসে উপমান ও উপমেয়র মধ্যে ভেদের আভাস থাকলেও, রূপক কর্মধারয় সমাসে উপমান ও উপমেয়র মধ্যে অভেদ কল্পিত হয়।

২৬) উপমান কর্মধারয় এবং রূপক কর্মধারয় সমাসের মধ্যে একটি পার্থক্য লেখো।

উত্তর: উপমান কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের পূর্বপদটি উপমান হলেও রূপক কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের পূর্বপদটি উপমেয় হয়। 

২৭) তৎপুরুষ সমাস বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে সমাসে পূর্বপদের কারকবাচক কিংবা সম্বন্ধবাচক বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থটিই প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: জল থেকে আতঙ্ক = জলাতঙ্ক, রথকে দেখা= রথদেখা প্রভৃতি।

২৮) কর্ম তৎপুরুষ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও। 

উত্তর: যে-তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের কর্মকারকের 'কে' বিভক্তিটি লোপ পায়, তাকে কর্ম তৎপুরুষ সমাস বলে। এই সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের মাঝে 'কে' এনে ব্যাসবাক্য নির্ণয় করতে হয়। যেমন-রথকে দেখা= রথদেখা, কলাকে বেচা = কলাবেচা প্রভৃতি।

২৯) করণ তৎপুরুষ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের করণবাচক 'এ', 'তে' প্রভৃতি বিভক্তি এবং দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক ইত্যাদি অনুসর্গ লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রধান হয়ে ওঠে তাকে করণ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-ঢেঁকি দিয়ে ছাঁটা ঢেঁকিছাঁটা, সঙ্গী দ্বারা হীন = সঙ্গীহীন প্রভৃতি।

৩০) নিমিত্ত তৎপুরুষ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে সমাসে পূর্বপদটি পরপদের নিমিত্তবাচক বা কারণবাচক হয়, তাকে নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস বলে। এই সমাসেও পূর্বপদটির বিভক্তি বা জন্য, উদ্দেশ্য, নিমিত্ত প্রভৃতি অনুসর্গ থাকলে তা লোপ পায় এবং পরপদের অর্থই প্রধান হয়। যেমন-ডাকের নিমিত্ত ঘর = ডাকঘর, বরণের নিমিত্ত ডালা = বরণডালা প্রভৃতি। 

৩১) অপাদান তৎপুরুষ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে সমাসে পূর্বপদের অপাদানবাচক বিভক্তি বা অনুসর্গটি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থটিই প্রধান হয়ে ওঠে তাকে অপাদান তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন- মৃত্যু হতে ভয় – মৃত্যুভয়, শাপ হতে মুক্তি = শাপমুক্তি, জল থেকে আতঙ্ক জলাতঙ্ক প্রভৃতি।

৩২) সম্বন্ধ তৎপুরুষ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে সমাসে পূর্বপদটি পরপদের সম্বন্ধ পদ স্থানীয় হয় এবং পূর্বপদ থেকে সম্বন্ধের 'র', 'এর' প্রভৃতি বিভক্তি লোপ পায়, তাকে সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-দেশের নেতা = দেশনেতা, ধানের খেত = ধানখেত, হংসের রাজা = রাজহংস প্রভৃতি। 

৩৩) অধিকরণ তৎপুরুষ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে সমাসে পূর্বপদ থেকে অধিকরণ কারকের 'এ', 'য়', 'তে' প্রভৃতি বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থই প্রধান হয়ে ওঠে, তাকে অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: গাছে পাকা = গাছপাকা, কণ্ঠে আগত = কণ্ঠাগত প্রভৃতি। 

৩৪) নঞ তৎপুরুষ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।

 উত্তর: যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের না বা নঞ-বাচক অব্যয় পদের সঙ্গে পরপদের বিশেষ্য বা বিশেষণের সমাস হয়, তাকে না-তৎপুরুষ (নঞ তৎপুরুষ) সমাস বলে। যেমন-নয় কাজ অকাজ, নয় শুভ = অশুভ প্রভৃতি। 

৩৫) উপপদ তৎপুরুষ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও। উত্তর: 'উপপদ'-এর অর্থ হল সমীপবর্তী পদ। যে তৎপুরুষ সমাসে উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের সমাস হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: অভ্র ভেদ করে যে = অভ্রভেদী।

৩৬) ব্যাপ্তি তৎপুরুষ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে তৎপুরুষ সমাসে ব্যাপ্তি বা বিস্তার অর্থে কালবাচক পদের সঙ্গে বিশেষ্য বা বিশেষণের সমাস নিষ্পন্ন হয়, তাকে ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাস বলে। এই সমাসের ফলে ব্যাপ্তার্থক (ধরে, ব্যাপিয়া প্রভৃতি) পূর্বপদ বা অনুসর্গ লুপ্ত হয়। যেমন: দীর্ঘকাল ব্যাপিয়া স্থায়ী দীর্ঘস্থায়ী, চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী প্রভৃতি। 

৩৭) ক্রিয়া বিশেষণ তৎপুরুষ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।

 উত্তর: যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদস্থিত ক্রিয়া বিশেষণবাচক পদের সঙ্গে পরপদ বিশেষণের সমাস হয়, তাকে ক্রিয়া বিশেষণ তৎপুরুষ সমাস বলে। এই সমাসে ভাবে, রূপে প্রভৃতি সমস্যমান সহায়ক পদ ব্যবহার করে ব্যাসবাক্য নির্ণয় করতে হয় এবং সমস্ত পদে তা লোপ পায়। যেমন: দৃঢ়ভাবে বন্ধ = দৃঢ়বদ্ধ, ঘনরূপে সন্নিবিষ্ট = ঘনসন্নিবিষ্ট, নিম (অর্ধ) রূপে রাজি = নিমরাজি প্রভৃতি।

৩৮) বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে? উদাহরণ দাও। 

উত্তর: যে-সমাসবদ্ধ পদের অর্থ পূর্বপদ বা পরপদ কোনোটিরই অর্থ প্রধানভাবে না বুঝিয়ে অন্য কোনো একটি তৃতীয় অর্থকে পরিস্ফুট করে তোলে, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: বীণা পাণিতে যার = বীণাপাণি, নীল কণ্ঠ যার = নীলকণ্ঠ প্রভৃতি।

৩৯) মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও। 

উত্তর: যে বহুব্রীহি সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যস্থিত পদটি লোপাতায় পদ তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বলে। যেমন: মুগের নয়নের মতো অন নয়ন যার= মুগনয়না, অগ্নির ন্যায় মূর্তি যার= অগ্নিমূর্তি প্রভৃতি।

৪০) নঞ বহুব্রীহি বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে বহুব্রীহি সমাসে না-বাচক (না, নাই, নয়, বে, বি প্রভৃতি) পূর্বপদের সঙ্গে উত্তর পদের (পরপদ) বিশেষ্যের সমাস নিষ্পন্ন পা হয় তাকে না-বহুব্রীহি (নঞ বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: নাই স্বত অর্থ যার = অনর্থক, নাই আদি যার = অনাদি প্রভৃতি। 

৪১) সহার্থক বহুব্রীহি বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও। 

উত্তর: যে বহুব্রীহি সমাসে সহার্থক পূর্বপদের সঙ্গে বিশেষ্য পরপদের সমাস নিষ্পন্ন হয়, তাকে সহার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে। এক্ষত্রে এন সমাসবদ্ধ পদের প্রথমে 'স' বসে। যেমন: দয়ার সহিত বর্তমান = সদয়, তর্কের সহিত বর্তমান = সতর্ক প্রভৃতি। 

৪২) সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও। 

উত্তর: যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ হয়, তাকে সংখ্যাবাচক বা সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি বলে। যেমন: দশ পা আনন যার = দশানন, ত্রি (তিন) নয়ন আছে যার = ত্রিনয়ন, তেব (তিন) পায়া আছে যার = তেপায়া প্রভৃতি।

৪৩) ব্যতিহার বহুব্রীহি বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও। উত্তর: যে বহুব্রীহি সমাসে পরস্পর সাপেক্ষ ক্রিয়ার ভাব বোঝাতে প বিশেষ্যের দ্বিতের দ্বারা সমাস নিষ্পন্ন হয়, তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস বলে। এই সমাসের পরপদটির শেষে সবসময়ই 'ই' হয়। যেমন: হাতে হাতে যে যুদ্ধ = হাতাহাতি, লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ = লাঠালাঠি প্রভৃতি।

৪৪)  দ্বিগু সমাস বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও। 

উত্তর: যে সমাসে পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ আর পরপদটি বিশেষ্য হয় এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার ফলে যা সমাহার বা সমষ্টিকে বোঝায়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন: পঞ্চ প্রদীপের সমাহার = পঞ্চপ্রদীপ।

৪৫) দ্বিগু সমাস কয় প্রকার?

উত্তর: বাংলা ব্যাকরণ অনুসারে দ্বিগু সমাস দু'প্রকারের-তদ্ধিতার্থক ও সমাহার।

৪৬) বর্তমানে কোন্ দ্বিগু সমাসের প্রচলন নেই?  

উত্তর: বর্তমানে বাংলা ভাষায় তদ্ধিতার্থক দ্বিগুর প্রচলন নেই বললেই চলে। । যেমন: দুকড়ি, সাতকড়ি প্রভৃতি।

৪৭) অব্যয়ীভাব সমাস বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও। উত্তর: যে সমাসে পূর্বপদ অব্যয়ের সঙ্গে পরপদ (উত্তর পদ) বিশেষ্যের সমাস নিষ্পন্ন হয়, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমন: বাস্তু থেকে চ্যুত = = উদ্বাস্তু, শীর্ষ থেকে পা পর্যন্ত = আপাদশীর্ষ, কণ্ঠ পর্যন্ত = আকন্ঠ, মিলের অভাব = গরমিল।

৪৮) নিত্যসমাস বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে সমাসের সাধারণ নিয়মে ব্যাসবাক্য হয় না নির্ণয় করতে গেলে অন্য পদের প্রয়োজন পড়ে তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমন: কৃষ্ণসর্প = কৃষ্ণসর্প, অর্থাৎ ব্যাসবাক্য ও সমাসবদ্ধ পদ এক। আবার 'গ্রামান্তর'-এই সমাসবদ্ধ পদটির ব্যাসবাক্য 'গ্রামের অন্তর' বললে এর প্রকৃত অর্থ পরিস্ফুট হয় না। তখন অন্য পদের সাহায্যে এর ব্যাসবাক্য নির্ণয় করা যায়। অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর, ইন্দুনিভ তুল্য = ইন্দুনিভ প্রভৃতি।

৪৯) অলোপ সমাস বলতে কী বোঝ? 

উত্তর: যে সমাসের সমস্ত পদে (সমাসবদ্ধ) পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায় না, তাকে অলোপ সমাস বলে। অলোপ সমাস কোনো স্বতন্ত্র সমাস নয়। দ্বন্দু, তৎপুরুষ এবং বহুব্রীহিতে অলোপের দৃষ্টান্ত দেখতে পাওয়া যায়।

৫০) বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও। উত্তর: অনেক ক্ষেত্রে একটি সম্পূর্ণ বাক্য কিংবা বাক্যাংশ সমাসবদ্ধ একটি পদ রূপে প্রযুক্ত হয়, তখন তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে। এই সমাসে সমাসবদ্ধ পদগুলি অপরিবর্তিত থাকে। যেমন-সব পেয়েছির দেশ, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।

৫১) 'একশেষ দ্বন্দু'-এর বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তর: একশেষ দ্বন্দু সমাসে সমস্যমান পদগুলির একটিমাত্র প্রধান পদ দিয়ে অন্যান্য পদগুলির অর্থ বোঝানো হয় এবং সমস্ত পদে বহুবচনান্ত পদ অবশিষ্ট থাকে। যেমন: তুমি ও সে = তোমরা।

৫২) সন্ধি ও সমাসের একটি পার্থক্য লেখো।

উত্তর: সন্ধি হল ধ্বনির মিলন কিন্তু সমাস হল দুই বা ততোধিক পদের মিলন। 

৫৩) 'বীণাপাণি' পদটির ব্যাসবাক্যে কোন্ বিভক্তি আছে?

উত্তর: বীণাপাণি = বীণা পাণিতে যার ('তে' বিভক্তি)

৫৪) সমানাধিকরণ বহুব্রীহি এবং উপপদ তৎপুরুষের একটি পার্থক্য লেখো।

উত্তর: উভয়ের ক্ষেত্রে সমাস নিষ্পন্ন পদের প্রকৃতি একরকম হলেও প্রয়োগ অনুসারে অর্থ ও বাক্যের পার্থক্য আছে। সমানাধিকরণ - বহুব্রীহিতে ব্যাসবাক্যের শেষ পদটি 'যার', 'যাতে', 'যার দ্বারা' হলেও উপপদ তৎপুরুষের ব্যাসবাক্যের শেষ পদটি 'যে' বা 'যিনি' হয়। ৫৫) 'তেপান্তর' ও 'যুগান্তর'-এই সমাসবদ্ধ পদ দুটির ব্যাসবাক্য লেখো। 

উত্তর: তিন (ত্রি) প্রান্তরের সমাহার = তেপান্তর (দ্বিগু) অন্য যুগ = যুগান্তর (নিত্য সমাস) 

৫৬) নঞ তৎপুরুষ ও নঞ বহুব্রীহির একটি পার্থক্য লেখো।

 উত্তর: নঞ তৎপুরুষের ক্ষেত্রে ব্যাসবাক্যে উত্তর পদটি বিশেষ্য বা বিশেষণ হয়, আর নঞ বহুব্রীহির উত্তর পদটি বিশেষ্য হয়।

৫৭) 'কণ্ঠাগত' এবং 'আকণ্ঠ'-এই সমাসবদ্ধ পদ দুটির সমাস নির্ণয় করো।

উত্তর: কন্ঠে আগত = কণ্ঠাগত (অধিকরণ তৎপুরুষ)

কণ্ঠ পর্যন্ত = আকণ্ঠ (অব্যয়ীভাব)

৫৮) একটি অলোপ দ্বন্দু ও একটি অলোপ বহুব্রীহির উদাহরণ দাও।

উত্তর: পথে ও ঘাটে পথেঘাটে (অলোপ দ্বন্দু) মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে মুখেভাত (অলোপ বহুব্রীহি)

৫৯) কোন্ কোন্ সমাসে উত্তর পদের অর্থ প্রাধান্য পায়? উত্তর: কর্মধারয় ও তৎপুরুষ সমাসে উত্তর পদের অর্থই প্রাধান্য পায়।

৬০) কোন্ কোন্ সমাসে পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পায়?

উত্তর: অব্যয়ীভাব ও নিত্য সমাসের ক্ষেত্রে পূর্বপদের অর্থই প্রাধান্য পায়।

আরও পড়ো- 

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area