Ads Area


১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত সরকার আইনের পটভূমি

সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম, এই পর্বটিতে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত সরকার আইনের পটভূমি ও প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত সরকার আইনের পটভূমি


১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত সরকার আইনের পটভূমি ও প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো। (Discuss the background and chief features of Govern- ment of India Act, 1935.)


পটভূমি:


১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার-আইন জাতীয়তাবাদী ভারতবাসীকে হতাশায় নিমজ্জিত করেছিল। বাস্তবে এই আইন ভারতবাসীকে কোনো প্রকার কার্যকরী শাসনক্ষমতা দেয়নি। কিন্তু জাতীয় কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার, হিন্দু-মুসলমান ভুল বোঝাবুঝি প্রভৃতি একাধিক কারণে ভারতবাসী ইংরেজের বিরুদ্ধে খুব বেশি সোচ্চার হতে পারেনি। অবশ্য ভারতবাসীর এই পশ্চাদপদী চরিত্র দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভারতবাসীর রাজনৈতিক কার্যকলাপ তার স্থবিরত্ব ত্যাগ করে অনেকটা গতিশীল হয়ে ওঠে। ঐ বৎসরে স্বরাজ্যদল এবং মুসলিম লিগ সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য ব্রিটিশ সরকারের উদ্দেশ্যে দাবি উত্থাপন করে। জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যেও ইংরেজ- বিরোধী সমালোচনা তীব্র হতে থাকে।

স্ট্যাটুটারি কমিশন:


 তৎকালীন বড়োলার্ট লর্ড আরউইন ভারতবাসীর ক্ষোভের তীব্রতা অনুভব করে ভারতে আও শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। তিনি লন্ডন কর্তৃপক্ষের কাছে 'স্ট্যাটুটারি কমিশন' গঠনের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে সুপারিশও করেন। সেইমতো ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে স্যার জন সাইমন-এর নেতৃত্বে সাতজন সদস্যবিশিষ্ট স্ট্যাটুটারি কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের ওপর ব্রিটিশ-ভারতের শাসন পদ্ধতি, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলির উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়ের ওপর অনুসন্ধান করার ও সুপারিশ করার দায়িত্ব ন্যস্ত হয়।

সাইমন কমিশন:


কিন্তু সাইমন কমিশনের সদস্যপদ ভারতীয় প্রতিনিধি গ্রহণের প্রশ্নে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ব্রিটিশ সরকার এই কমিশনে কোনো ভারতীয় সদস্যগ্রহণে রাজি হননি। তাঁদের মতে, ভারতীয় সদস্য গ্রহণ করলে কমিশন তার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারবেন না। সরকারের ধারণা ছিল ভারতীয় সদস্যগ্রহণের জন্য জাতীয় কংগ্রেস দাবি উত্থাপন করলেও মুসলিম লিগ-সহ সংখ্যালঘিষ্ঠ সম্প্রদায়গুলি ইংরেজ সরকারের যুক্তিকেই সমর্থন করবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটল না। মুসলিম লিগ-সহ সমস্ত ভারতীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠী এই কমিশনের বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নিল। সাইমন কমিশন ভারতে উপস্থিত হলে (১৯২৮ খ্রিঃ) দেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয়।

নেহরু রিপোর্ট:


সাইমন কমিশন বর্জনের সাথে সাথে জাতীয় কংগ্রেস একটি সর্বসম্মত শাসনতন্ত্র রচনার কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই উদ্দেশ্যে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে একটি সর্বদলীয় সম্মেলন আহুত হয়। কিন্তু হিন্দু, মুসলমান, শিখ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের পরস্পরবিরোধী দাবির ফলে অবস্থা জটিল হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত মতিলাল নেহরু- র নেতৃত্বে গঠিত একটি ক্ষুদ্র কমিটির ওপর সংবিধান রচনার দায়িত্ব ন্যস্ত হয়।

এই কমিটি যে প্রতিবেদন রচনা করে, তার সাধারণভাবে নেহরু রিপোর্ট (Nehru Report ) নামে খ্যাত। কিন্তু নেহরু কমিটি রচিত সংবিধানের খসড়া দেশের সমস্ত দলকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়। মুসলিম, শিখ, অনুন্নত দল প্রভৃতি অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ নেহরু রিপোর্টের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করেন। কংগ্রেস এককভাবই 'নেহরু রিপোর্ট' গ্রহণ অথবা “পূণ স্বাধীনতা দান' এই দাবিতে ব্রিটিশ সরকারের নিকট এক চরমপত্র প্রেরণ করে।

আইন-অমান্যের সূচনা:


এদিকে মে মাসে ইংল্যান্ডে শ্রমিকদল সরকার গঠন করলে সামগ্রিক অবস্থার চরিত্রগত পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দেয়। ইতিমধ্যে সাইমনও দুই পর্যায়ে তাঁর সুপারিশ দাখিল করেন। সাইমন রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার লন্ডনে গোল টেবিল বৈঠক আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু জাতীয় কংগ্রেস এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দিহান ছিল। কংগ্রেস দাবি আদায়ের জন্য আইন- অমান্য আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কংগ্রেসের অসহযোগিতার ফলে প্রথম গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বড়োলাট আরউইন বুঝতে পারেন যে, কংগ্রেসের অবর্তমানে ভারত-সংক্রান্ত যে-কোনো ধরনের আলোচনা বা সিদ্ধান্ত অকার্যকর হতে বাধ্য। তাই তিনি কংগ্রেসের সাথে সহযোগিতার ও সমঝোতার নীতি গ্রহণ করেন।

তাঁর প্রচেষ্টায় স্বাক্ষরিত হয় 'গান্ধী আরউইন চুক্তি'। এই চুক্তির অন্যতম শর্ত অনুযায়ী জাতীয় কংগ্রেস দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন (১৯৩১ খ্রিঃ)। কিন্তু মুসলিম লিগের সংকীর্ণ ও অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন এবং ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক তাকে প্ৰচ্ছন্ন মদত দেবার ফলে ক্ষুব্ধ গান্ধীজি বৈঠক অসমাপ্ত রেখে চলে আসতে বাধ্য হন। অতঃপর জাতীয় কংগ্রেস দ্বিতীয় পর্যায়ের আইন অমান্য শুরু করে (১৯৩২-৩৪ খ্রিঃ)।

১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইন জারি:


বড়োলাট লর্ড উইলিংডন কঠোর দমননীতি দ্বারা কংগ্রেসের আইন অমান্য আন্দোলনকে দমন করতে বদ্ধপরিকর হন। অবশ্য ব্রিটিশ সরকার এটাও উপলব্ধি করেন যে, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে যেমন ভারত- সম্পর্কিত কোনো সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ হবে না, তেমনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে শুধুমাত্র চণ্ডনীতি দ্বারা বশীভূত করাও যাবে না। তাই কংগ্রেস-বর্জিত তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠকের (১৯৩২ খ্রিঃ) সুপারিশের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার একটি ‘শ্বেত-পত্র' প্রকাশ করেন (১৯৩৩ খ্রিঃ)। এই শ্বেতপত্রের প্রস্তাবগুলির ভিত্তিতে ভারতের সাংবিধানিক সংস্কার-কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার জন্য সংসদের একটি যৌথ কমিটির ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের 'ভারত শাসন আইন' গৃহীত হয়।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দুটি উল্লেখযোগ্য অংশ হল- (১) ব্রিটিশ- ভারতীয় প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্যগুলি নিয়ে গঠিত একটি কেন্দ্রীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন এবং (২) প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন।

কেন্দ্রীয় যুক্তরাষ্ট্র:


যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় বলা হল যে, যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার গভর্নর-জেনারেল ও একটি মন্ত্রিসভার ওপর ন্যস্ত থাকবে। মন্ত্রীরা আইনসভার সদস্যদের মধ্যে থেকে গর্ভনর-জেনারেল কর্তৃক মনোনীত হবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কাজগুলিকে “সংরক্ষিত” (Reserved) ও 'হস্তান্তরিত' (Transferred) -এই দু'ভাগে বিভক্ত করা হল। প্রতিরক্ষা, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা, ধর্ম প্রভৃতি সুরক্ষিত বিষয়গুলি পরিচালনা করবেন স্বয়ং গভর্নর-জেনারেল।

হস্তান্তরিত বিষয়গুলি তত্ত্বাবধান করবেন বিভাগীয় মন্ত্রীগণ। এইভাবে কেন্দ্রে ‘দ্বৈত-শাসনব্যবস্থা' (Dyarchy) প্রবর্তিত হল। প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রে দেশীয় রাজ্যগুলির যোগদান স্বেচ্ছামূলক করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে আইন-প্রণয়নের জন্য দুই কক্ষযুক্ত আইনসভা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঊর্ধ্বকক্ষের সদস্যসংখ্যা নির্ধারিত হল ২৬০ জন। এর মধ্যে দেশীয় নৃপতিগণ ১০৪ জন সদস্য মনোনীত করবেন। গভর্নর-জেনারেল মনোনীত করবেন ৬ জন এবং প্রদেশগুলি কর্তৃক নির্বাচিত হবেন ১৪০।

অবশিষ্ট দশটি আসন খ্রিস্টান, অ্যাংলো- ইন্ডিয়ান প্রভৃতি সম্প্রদায়ের সংরক্ষিত রইল। নিম্নকক্ষের সদস্যসংখ্যা নির্ধারিত হল ৩৭৫ জন। এক্ষেত্রেও দেশীয় রাজ্য, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তপশিলি সম্প্রদায় প্রমুখের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখা হল। উভয়কক্ষের সদস্যগণ নিজ নিজ সভার অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নির্বাচনের অধিকার পেলেন।

আইনসভা আহ্বান ও বাতিলের ক্ষমতা পেলেন বড়োলাট। তাঁর অনুমোদন ব্যতীত কোনো বিল আইনে পরিণত হতে পারবে না। প্রয়োজনে বড়োলাট স্বয়ং অর্ডিন্যান্স জারি করে আইনবিধি তৈরি করতে পারবেন। তবে এর মেয়াদ হবে ৬ মাস। অবশ্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনুমোদন পেলে তা তিন বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকতে পারবে।

প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন:


১৯৩৫-এর আইনে প্রদেশগুলিতে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ দেওয়া হয়। প্রদেশে গর্ভনর (ছোটোলাট) একটি মন্ত্রিপরিষদের সাহায্যে শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পান। স্থির হল, মন্ত্রীগণ আইনসভার সদস্যদের মধ্য থেকে মনোনীত হবেন। বৃহৎ প্রদেশগুলিতে, যথা – বাংলা, আসাম, মাদ্রাজ, বোম্বাই, বিহার, যুক্তপ্রদেশে দুই কক্ষযুক্ত আইনসভা গঠিত হবে।

ঊর্ধ্বকক্ষের নাম হল 'আইন পরিষদ' (Legislative Council) এবং নিম্নকক্ষের নাম হল 'আইন-সভা (Legislative Assembly)। অন্যান্য পাঁচটি প্রদেশে এক কক্ষযুক্ত আইন-সভা গঠিত হবে। উপরোক্ত আইনসভাগুলির সদস্যপদ 'সাধারণ' ও 'সাম্প্রদায়িক'—এই দু'ভাগে বিভক্ত করা হল। সাধারণ আসনগুলির মধ্যে আবার তপশিলি-অনুন্নত সম্প্রদায়ের জন্য কিছু আসন সংরক্ষিত রাখা হল।

আইন-প্রণয়নের ক্ষেত্রে মূল ক্ষমতা ন্যস্ত হল আইনসভার হাতে। আইন পরিষদ কেবলমাত্র বিল সংশোধন ও অনুমোদনের অধিকার পেল। প্রাদেশিক আইনসভার ক্ষেত্রেও গভর্নরদের বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়। যে-কোনো অনুমোদিত বিল গভর্নরের অনুমতি ব্যতিরেকে আইনের মর্যাদা পাবে না। জরুরি প্রয়োজনে গভর্নর অর্ডিন্যান্স জারি করার অধিকার পেলেন। এমনকি দরকার মনে করলে আইনসভা ভেঙে দিয়ে গভর্নর নিজের হাতে প্রদেশের শাসনভার গ্রহণ করতেও পারবেন বলে স্থির হল।

মূল্যায়ন:


১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইন ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। বস্তুত এই আইনে এক অদ্ভূত ধরনের 'বিকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয়' দৃষ্টিভঙ্গির অবতারণা করা হয়। মুসলিম লিগ এই আইনকে 'সম্পূর্ণ অংশগ্রহণযোগ্য' বলে অভিহিত করে এবং জানায় যে, “এই আইন দ্বারা মুসলিম সমাজ অন্য যে-কোনো সম্প্রদায়ের থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে" ("The Muslim classes and the Muslim masses will suffer from the new Scheme as much as any other Section of the Indian people. ")।

হিন্দুমহাসভা এই আইনকে 'গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ বিকাশের পথে প্রতিক্রিয়াশীল ও বাধাসৃষ্টিকারী সাংবিধানিক ব্যবস্থা' বলে বর্ণনা করে। বেআইনি ঘোষিত জাতীয় কংগ্রেস এক প্রস্তাব দ্বারা বহুপূর্বেই এই বিলকে “দামি মুখোশের আড়ালে” থেকে দেশবাসীর ওপর বিদেশি মানুষের শাসন ও শোষণ কায়েম রাখার অপচেষ্টা বলে বর্ণনা করে (...... “It is to facilitate and perpetuate the domination and exploitation of the country by alien people under a costly mask. ")| শিখনেতা সর্দার মঙ্গল সিং একে সম্পূর্ণ অনিচ্ছুক ও অসহায় মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সাংবিধানিক ব্যবস্থা' বলে বর্ণনা করেন।

মঙ্গল সিংহের ভাষায : "A constitu- tion which has been forced upon unwilling and helpless people. " মহম্মদ আলি জিন্নাহ মন্তব্য করেন যে : “১৯৩৫-এর পরিকল্পনা ছিল সম্পূর্ণ পচনশীল, মূলত মন্দ এবং অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য।” এমনকি ব্রিটিশ শ্রমিকদলের নেতা ক্লিমেন্ট এটলি মন্তব্য করেন যে, “এই সংবিধানে একটি জিনিস কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না, – তা হল ভারতীয় জনগণের স্বাধিকারের বিন্দুমাত্র স্বীকৃতি।”

প্রকৃতপক্ষে ১৯৩৫-এর আইন ছিল ইংরেজের কষ্টকল্পনার ফসল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড বা রাশিয়ার যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সাথে এই বিলের কোনো মিল ছিল না। ব্রিটিশ সরকার এই আইন দ্বারা কৌশলে ভারতে অনৈক্যের বীজ বপন করতে চেয়েছিল। এহেন যুক্তরাষ্ট্র কল্পনার পেছনে কোনোপ্রকার ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, জাতিগত বা ভাষাগত যুক্তি ছিল না। স্বৈরাচারী রাজন্যবর্গের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও অধিকার প্রদান করে সরকার ভারতবাসীর জাতীয় আন্দোলনকে দুর্বল করতে এবং সাম্রাজ্যবাদকে পুষ্ট করতে প্রয়াসী হয়েছিল। প্রতিক্রিয়াশীল রাজ্যন্যবর্গকে গণতান্ত্রিক ও স্বাধীনতাকামী ভারতবাসীর আইন রচনায় দায়িত্ব দেওয়া ছিল বিড়ালকে মাছ পাহারার দায়িত্ব দেবার সমতুল্য।

১৯৩৫-এর আইনবিধি অনুযায়ী গঠিত মন্ত্রিসভাকে দায়িত্বশীল সরকার বলা যাবে না। কারণ আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে পরাজিত হলেও মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হত না। আইন, আমলা ও সামরিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণের কোনো ক্ষমতা আইনসভার ছিল না। গভর্নর-জেনারেল ছিলেন সর্বময় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। যে-কোনো গৃহীত আইন বাতিল, সংশোধন, খুশিমতো আইন-প্রণয়ন এবং আইনসভাকে বজায় রাখা বা বাতিল করা- সবই ছিল তাঁর ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত।

কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার তুলনায় প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থায় কিছু কিছু গ্রহণযোগ্য উপাদান ছিল। যেমন এখানে কোনো সংরক্ষিত বিষয় ছিল না বা আইন-প্রণয়নে আইনসভার সামান্য কিছু স্বাধীনতা ছিল। তবে এক্ষেত্রেও গভর্নরদের হাতে অস্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা প্রদান করে আইনসভাকে পঙ্গু করে রাখার চেষ্টা বজায় ছিল। অবশ্য জাতীয় কংগ্রেসের বামপন্থী গোষ্ঠী এই আইন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলেও দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী আইনসভায় যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। নির্বাচনে জয়লাভ করে মন্ত্রিসভা গঠন করার পর দক্ষিণপন্থীরা বুঝেছিল যে, ১৯৩৫-এর স্বায়ত্তশাসন অধিকার আসলে ছিল ‘অন্তঃসারশূন্য' উচ্চনাদ।

আরও পড়ুন-
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area