Ads Area


কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশন সম্পর্কে কী জানো?

সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম, এই পর্বটিতে কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশন সম্পর্কে কী জানো?, লাহোর কংগ্রেসের উদ্দেশ্য কি ছিল?, লাহোর অধিবেশন কবে হয় সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে।

কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশন সম্পর্কে কী জানো

কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশন (১৯২৯ খ্রিঃ) সম্পর্কে কী জানো? ভারতের জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে লাহোর কংগ্রেসের গুরুত্ব উল্লেখ করো। (What do you know about the Lahore Conference of the National Congress? What was its importance?)


উত্তর

প্রেক্ষাপট:


১৯২৯-এর মে মাসে রামসে ম্যাকডোনাল্ড এর নেতৃত্বে ব্রিটেনে লেবার পার্টি সরকার গঠন করলে ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দক আশা। করেছিলেন যে, এই উদার সরকার ভারতবাসীর স্বায়ত্তশাসনের ন্যায্য দাবির প্রতি যথার্থ সহানুভূতি দেখাবে। সরকারও ভারতবাসীর মনোভাব জানার জন্য সত্বর বড়োলাট লর্ড আরউইনকে লন্ডনে তলব করে। কিন্তু বড়োলাট ভারতবাসীর দাবি সম্পর্কে সরকারের নীতিগত সমর্থন এবং একটি গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার কথা দিলে, কংগ্রেসের তরুণ নেতারা কিছুটা হতাশ হন।

এদিকে রক্ষণশীল দলের নেতা উইনস্টন চার্চিল এই সময় ঘোষণা করেন যে, ভারতকে ‘ডোমিনিয়ম স্ট্যটাস' প্রদান হবে একটি ‘অপরাধমূলক কাজ। ক্ষমতাসীন না হলেও চার্চিলের এই ঘোষণা ভারতীয় রাজনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল। কারণ সেই মুহূর্তে শ্রমিক দলের সরকার নানা কারণে রক্ষণশীল দলের সমর্থনের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল ছিল। তাই ম্যাকডোনাল্ড এক্ষুনি স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে দ্বিধাগ্রস্ততা দেখান।

জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ বড়োলাট আরউইনের সাথে সাক্ষাৎ করলে (২৩ শে ডিসেম্বর, ১৯২৯ খ্রিঃ) তিনিও জানিয়ে দেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ডোমিনিয়ন মর্যাদা অর্পণ সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্ভব নয়। সরকারের এই সিদ্ধান্ত জাতীয় নেতৃবন্দের মনে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ সঞ্চার করে। স্বভাব-শান্ত গান্ধীজিও কঠোর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে জানান : “অতঃপর আমার সামনে আপসের আর কোনো পথ খোলা নেই। পূর্ণ স্বরাজের দাবি আমাকে সমর্থন করতেই হবে।” পূর্ণ কংগ্রেসের চরমপত্র: এমনই এক আশা ও আশাভঙ্গের মুহূর্তে জাতীয় কংগ্রেস পাঞ্জাবের লাহোর-এ বার্ষিক অধিবেশনে সমবেত হয়। সম্ভবত এটিই ছিল।

কংগ্রেসের সবচেয়ে স্মরণীয় বার্ষিক অধিবেশন। এই অধিবশনে সভাপতি মনোনয়েনের প্রশ্নে কিছু জটিলতা ছিল। ১৮টি প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির মাত্র ৩টি কমিটি সভাপতি পদে জওহরলালকে চেয়েছিল। অন্যান্যদের ইচ্ছা ছিল জাতীয় রাজনীতির এই উত্তেজনাকর মুহূর্তে গান্ধীজির মতো একজন মানুষ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করুন। কিন্তু গান্ধীর পছন্দ ছিলেন তাঁর ভাবশিষ্য জওহরলালই। গান্ধীজি জানিয়ে দেন যে, যতদিন জনগণের ভালোবাসা ও আস্থা তাঁর উপর থাকবে, ততদিন তিনি সভাপতি না-হলেও দেশের কাজ করে যাবেন।

জওহরলাল ও অন্যান্য যুবনেতাদের সম্পর্কে সংশয় প্রকাশকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন- “কেউ কেউ ভয় পাচ্ছেন প্রবীণদের হাত থেকে নবীনদের হাতে ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটলে কংগ্রেসের সর্বনাশ হবে। আমি তা মনে করি না।” জওহরলালের নেতৃত্ব ক্ষমতা প্রসঙ্গে গান্ধীজি বলেন - “চিন্তাধারার দিক থেকে তিনি নিঃসন্দেহে চরমপন্থী, আশপাশের লোকেদের থেকে অগ্রণী। কিন্তু তিনি বিনয়ী ও বাস্তববাদী আন্দোলনের গতিকে ভাঙনের পর্যায়ে নিয়ে যাবেন না।" শেষ পর্যন্ত গান্ধীর ইচ্ছাই পূর্ণ হয়। ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন তরুণ কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু।

পূর্ণ স্বরাজের দাবি:


সভাপতির ভাষণে জওহরলাল বিদেশি শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য দেশের সফল মানুষকে উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেছিলেন -“আমার মতে, মুক্তির অর্থ শুধুমাত্র বিদেশি শাসনের উচ্ছেদ নয়। আমি একজন সমাজতন্ত্রী ও রিপাবলিকান, রাজরাজড়ায় আমার কোনো আস্থা নেই। আস্থা নেই সেই ব্যবস্থার উপর যা শ্রমশিল্পের আধুনিক রাজাদের (শিল্পপতি) তৈরি করে, মানুষের জীবন ও সম্পদের উপর যাদের কর্তৃত্ব পুরোনো রাজাদের চেয়ে অনেক বেশি, আর তাদের পদ্ধতি পুরোনো সামন্ততান্ত্রিক অভিজাতদের মতোই লুণ্ঠনধর্মী " ভবিষ্যৎ আন্দোলনের প্রকৃতি সম্পর্কে তিনি জানিয়ে দেন যে, “আজকের যে-কোনো মুক্তি- আন্দোলনকেই গণ-আন্দোলন হতে হবে এবং সংগঠিত বিদ্রোহের সময় ছাড়া সেই গণ- আন্দোলনকে একান্তভাবেই শান্তিপূর্ণ হতে হবে। বিক্ষিপ্ত হিংসার প্রয়াস সেই আন্দোলনকে কেবল বিপথচালিত ও দুর্বল করবে।”

জাতীয় পতাকা উত্তোলন:


অবশেষে লাহোর কংগ্রেসে গৃহীত হয় পূর্ণ স্বরাজের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও হর্ষধ্বনির মধ্যে ১৯২৯-এর ৩১ শে ডিসেম্বর মধ্যরাত্রে ইরাবতীর (রাভি) তীরে জওহরলাল ভারতের স্বাধীনতার ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেন। ভারতের জাতীয় আন্দোলনে এক নবতম অধ্যায়ের সূচনা হয় পূণ্যসলিলা রাভীকে সাক্ষী রেখে।

এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ লাহিড়ী লিখেছেন- "বহুদিনের ওপারে একদিন মধ্যরাত্রে আমরা শিবির ছাড়িয়ে ছটিয়া বাহির হইয়াছিলাম। সেদিন রাজী নদীর নিস্তক দুই তীর আমাদের জয়ধ্বনিতে মুখরিত হইয়াছিল। তুষার শীতল নদীতীরে শীতের প্রচণ্ড হিংস্রতা আমাদের নিরস্ত করিতে পারে না ......... রাজী নদীর তীরে দাঁড়াইয়া আমরা দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করিয়াছিলাম যে, সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্য হইতে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করা প্রত্যেক ভারতবাসীর অবিচ্ছেদ্য অধিকার।” ১৯৩০-এর ২৬শে জানুয়ারি সারা দেশ জুড়ে মহাসমারোহে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়। জাতীয় কংগ্রেস স্থির করে- যতদিন না জাতি পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করবে, ততদিন প্রতিবছর ২৬শে জানুয়ারি দেশবাসী স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে।

লাহোর কংগ্রেসের গুরুত্ব:


ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং জাতীয় কংগ্রেসের ইতিহাসে লাহোর অধিবেশনের গুরুত্ব অসীম। এখানেই জাতীয় কংগ্রেস প্রথম অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে জাতীয় আন্দোলনের লক্ষ্য সম্পর্কে একটা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছিল। কংগ্রেসের লক্ষ্য হিসেবে পূর্ণ স্বরাজ বা স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল নিঃসন্দেহে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ও একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস অথবা পূর্ণ স্বরাজ- ভারতবাসীর আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্পর্কে যুব নেতা ও প্রবীণদের দোদুল্যমানতা ও সংঘাতের সমাপ্তি ঘটেছিল লাহের কংগ্রেসে।

গান্ধীজি প্রত্যক্ষ গণ- আন্দোলনের আবশ্যিকতা সম্পর্কে এখানেই তাঁর দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান ঘটান এবং বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে জওহরলাল প্রমুখ তরুণ নেতাদের জাতীয়, কংগ্রেসের পরিচালকের আসনে অধিষ্ঠিত করতে প্রয়াসী হন। বস্তুত জাতীয় আন্দোলনের লক্ষ্য ও কর্মসূচি সম্পর্কে লাহোর কংগ্রেসের দৃপ্ত সিদ্ধান্ত ভারতবর্ষ ও ভারতবাসীকে নবজীবনের যাত্রা শুরুর নির্দেশ দিয়েছিল।


আরও পড়ুন-
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area