Ads Area


সমাজজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব প্রবন্ধ রচনা | দূরদর্শনের ভালো মন্দ রচনা

সমাজজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব প্রবন্ধ রচনা | দূরদর্শনের ভালো মন্দ রচনা


সমাজজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব প্রবন্ধ রচনা- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “সমাজজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।




সমাজজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব প্রবন্ধ রচনা



ভূমিকা:


দূরদর্শন বর্তমান সমাজের একটি জনপ্রিয় ও শক্তিশালী গণমাধ্যম। গ্রিক ‘টেলি’ শব্দের অর্থ দূর এবং ‘ভিষণ’ শব্দের অর্থ দৃশ্য, এই দুয়ের মিলনে ‘টেলিভিশন’ বা ‘দূরদর্শন’ শব্দের সৃষ্টি। এবং পৃথিবীর দূরতম অংশের এমনকি মহাকাশের সুদূর লোকের দৃশ্য আর ধ্বনিকে মুহূর্তের মধ্যে রূপায়িত করে এই যন্ত্রটি মানুষের কৌতূহল বাড়িয়ে তোলে। আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও বড়ো হাতিয়ার হল দূরদর্শন। একে ‘যন্ত্র শিক্ষক’ও বলা চলে। সমাজজীবনে শিক্ষাবিস্তারে দূরদর্শনের প্রভাব আজ কারও অজানা নয়।


দূরদর্শনের আবিষ্কার:


১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী জন বেয়ার্ড দূরদর্শন আবিষ্কার করেন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনই পৃথিবীতে প্রথম ব্যবসায়িক ভিত্তিতে দূরদর্শনের প্রচার শুরু করেন। বর্তমানে টেলিভিশন নিয়ে গবেষণা সূত্রে পকেট টেলিভিশন আবিষ্কারও সম্ভব হয়েছে। মহাকাশকে ঘিরে সম্ভব হয়েছে টেলিভিশনের অগ্রগতি। দূরদর্শনে অনুষ্ঠান উন্নয়নে ভারতের কৃত্রিম উপগ্রহ ‘অ্যাপোলো’র বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।


দূরদর্শনের গঠনকৌশল:


দূরদর্শন ক্যামেরায় প্রথমে ছবিকে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে চিত্রসংকেতে পরিণত করা হয়। তারপর চিত্রসংকেতকে দূরদর্শনের টাওয়ার থেকে বিভিন্ন দিকে প্রেরণ করা হয়। দূরদর্শনের পর্দাটি কাচের তৈরি। কাচের ভিতরের পিঠে ফফর নামে একটি বিশেষ পদার্থের আস্তরণ লাগানো থাকে। এর ফলে ইলেকট্রন কণা দূরদর্শনের পর্দায় আঘাত করলেই সেখান থেকে আলোক বিচ্ছুরিত হয়। শব্দসংকেত এবং চিত্রসংকেত দূরদর্শনের কেন্দ্র থেকে একই সময়ে বিচ্ছুরিত হয়। এই সামঞ্জস্য বিধানের ফলে একই সঙ্গে শব্দগ্রহণ ও চিত্রদর্শন করতে পারা যায়।


ভারতে দূরদর্শন:


ভারতে দূরদর্শন চালু হয় ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে দূরদর্শন এসেছে কলকাতায়। এরপরে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ থেকে রঙিন দূরদর্শনের কাজ শুরু হয়; যার ফলে বর্তমানের দূরদর্শন আরও বেশি আকর্ষণীয়। গণশিক্ষার ক্ষেত্রে তা বিশেষ কার্যকরী।


শিক্ষাবিস্তারে দূরদর্শন:


বর্তমানে শিক্ষাবিস্তারে দূরদর্শনের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে অডিয়োভিশুয়ালের মাধ্যমে শিক্ষার প্রচার চলছে। দুরদর্শনের মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষণীয় বিষয় সম্বন্ধে জানতে পারা যাচ্ছে। এমনকি সরাসরি দূরদর্শন কেন্দ্রে টেলিফোনে যোগাযোগ করে বহু জানার ইচ্ছাকে পরিতৃপ্ত করতে পারা যায়। ঘরে বসে বিশ্বের নানা আবিষ্কার, শিল্প-সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার প্রভৃতি সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পারা যায়। শিক্ষাবিস্তারে দূরদর্শনের এই ভূমিকা কম গৌরবের নয়।


সমাজজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব:


বর্তমানে বেতার এবং সংবাদপত্র মাধ্যম শিক্ষার অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু এক্ষেত্রে দূরদর্শন আরও বেশি কার্যকর। দূরদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তিও শিক্ষা নিতে পারেন। এ ছাড়া এটি অবসরবিনোদনের একটি প্রধান মাধ্যম। একদিকে এর সাহায্যে যেমন অবসরবিনোদন হয়, অন্যদিকে তেমনি পুথিগত শিক্ষা ছাড়া বিভিন্ন গঠনমূলক শিক্ষাও লাভ করা যায়। বিশ্বের এক প্রান্তে বসে মানুষ যখন পৃথিবীর অন্য প্রান্তে ঘটা সমসাময়িক ঘটনাবলি নিজের চোখে দেখে–দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ, আমেরিকার ধ্বংসাত্মক গোলাবর্ষণ কিংবা কোনো পল্লির প্রাকৃতিক দৃশ্য, তখন সত্যিই এক অদ্ভুত জিনিস মনে হয় দূরদর্শনকে। তখনই সমাজজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব অনুধাবন করা যায়। বলতে পারা যায় দূরর্শন আধুনিক জীবনের অন্যতম সঙ্গী।


দূরদর্শনের সুবিধা:


দূরদর্শনের মাধ্যমে কথা, চিত্র, রং, শব্দ ও গতি একই সঙ্গে প্রতিফলিত করা যায়। যে কোনো উদ্ভাবনকে অল্প সময়ের মধ্যে দূরে ছড়ানো যায়। গণপ্রচারে দূরদর্শন অনুকূল। বই বা সংবাদপত্র একসঙ্গে অনেকে পড়তে পারে না। কিন্তু দূরদর্শন একসঙ্গে সকলে দেখতে পারে। ভিডিও টেপরেকর্ডারের সাহায্যে যে কোনো অনুষ্ঠান রেকর্ড করে রাখা যায়। দূরদর্শনের সাহায্যে যে-কোনো অনুষ্ঠানের লাইভ ব্রডকাস্ট অথবা যে-কোনো অনুষ্ঠানের রিলে দেখানো যায়।

দূরদর্শন সেট এক জায়গা থেকেআর- এক জায়গায়ে বহন করে নিয়ে যাওয়া যায়। এর মাধ্যমে দেশদেশান্তরের প্রাকৃতিক দৃশ্য, কত বিচিত্র মানুষের জীবনধারা স্পষ্ট অনুভব করা যায়। এর মাধ্যমে সংহতিচেতনা ও সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করা সম্ভব। মানুষের মনে বিশ্বমানবতা বোধ জাগ্রত করে তোলা সম্ভব। এর মাধ্যমে মুহূর্তে কর্মক্লান্ত মানুষকে আনন্দ দান করা যায়। এদিক থেকে দূরদর্শনের গুরুত্ব ও কার্যকারিতা অপরিসীম।



সমাজীবনে দূরদর্শনের কু-প্রভাব:


(১) দূরদর্শন শিশুমনে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে এর কিছু কিছু অনুষ্ঠানসূচি তরুণ-তরুণীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

(২) এটি চোখের ওপর প্রচণ্ড প্রভাব ফেলে। এ কারণে দৃষ্টিশক্তি কমে।

(৩) দূরদর্শন শিক্ষার্থীর পঠনপাঠনের আগ্রহ কেড়ে নিয়েছে। তাদেরকে করে তুলেছে চঞ্চল।

(৪) দূরদর্শন সাধারণ মানুষের গুরুত্বপূর্ণ সময় কেড়ে নিয়ে তাদেরকে অলস করে তুলছে।

(৫) মানুষের বাস্তবতা বোধ নষ্ট করে তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলছে।

(৬) সর্বোপরি, দূরদর্শনে যৌনতার প্রচার যুবসমাজ তথা অপ্রাপ্তবয়স্কদের চাওয়াপাওয়ার বেদনায় জর্জরিত করে তাদেরকে অধঃপতনের পথে ঠেলে দিচ্ছে।


উপসংহার:



তবুও গণশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে দূরদর্শন বিশেষ মূল্যবান। একে আরও বেশি শিক্ষামূলক এবং সক্রিয় করে তুলতে হবে। তবেই দূরদর্শন তার যথার্থ অর্থ নিয়ে আমাদের কাছে ধরা দেবে।



আরও পড়ুন-


Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area