Ads Area


রবীন্দ্রনাথের সার্ধশততম জন্মজয়ন্তী রচনা | Rabindranath 150th Birth Anniversary Composition

রবীন্দ্রনাথের সার্ধশততম জন্মজয়ন্তী রচনা | Rabindranath 150th Birth Anniversary Composition

বিদ্যালয়ে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন রচনা


ভূমিকা:

প্রথম জীবনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, “মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাহি ।” তখন তিনি বিশ্বকবি হননি । কিন্তু সেদিনের তাঁর সেই অন্তরবাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছে । আজ তিনি কেবল বাঙালির তথা ভারতবাসীর আদরনীয় কবিই নন , বিশ্ববাসীর প্রিয় কবি হয়ে উঠেছেন । তাঁর রচনাবলি অনূদিত হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় । দেশে বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বকবি হিসেবে সম্মান জানানো হচ্ছে তাঁকে । তাঁর গান গেয়ে ভিখারি ভিক্ষা করছে । তাঁর অঙ্কিত ছবি জগৎসভায় সমাদৃত হয়েছে । তার আবির্ভাবের পর দেড়শ বছর পার হয়ে গেল । তথাপি কবি হিসেবে তাঁর খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা আজও অমলিন । কেবল অমলিনই নয়, উত্তরোত্তর ক্রমবর্ধমান ।


জীবন:

১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ (১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে) জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন । পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, জননী সারদা দেবী । সে সময় জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ভারতীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত ছিল । সমগ্র দেশব্যাপী ধর্মসংস্কার ও ধর্ম আন্দোলনের যে ঢেউ জেগেছিল, তার অন্যতম ধারক ও বাহক ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর । এ ছাড়া রবীন্দ্র অগ্রজ দ্বিজেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, স্বর্ণকুমারী দেবী প্রমুখ বাংলা সাহিত্যের আঙিনাকে রেখেছিলেন সমৃদ্ধ করে । এই আবহাওয়ায় রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাব ও বেড়ে ওঠা । ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্য রচনা করে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন । তাঁর জীবনের আর একটি মহৎ কর্ম হল শান্তিনিকেতনে ‘বিশ্বভাবতী’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা । ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রবাণ (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট) এই বিস্ময়কর প্রতিভাধর মনীষীর জীবনাবসান ঘটে ।


সাহিত্য ও শিল্পকৃতি:

মাত্র চোদ্দো বছর বয়স থেকেই তাঁর রচিত কবিতা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেতে থাকে । এরপর একে একে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘ভগ্নহৃদয়’, ‘সন্ধ্যা সংগীত’, ‘প্রভাত সংগীত’, ‘ছবি ও গান’, ‘কড়ি ও কোমল’, ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ ‘গীতাঞ্জলি’, ‘গীতিমাল্য’ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থগুলি । কেবল কাব্যই নয়, ভ্রমণ কাহিনি, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক-সাহিত্যের যে ধারাটিতে তিনি হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন । সাহিত্যধারার স্বতন্ত্র ও নতুন কয়েকটি রীতিরও তিনি প্রবর্তন করেন । সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল ছোটোগল্পের ধারা ও পত্রসাহিত্যের ধারা । তাঁর রচিত ও সুরারোপিত সংগীতগুলি কেবল অভূতপূর্ব সাহিত্যগুণান্বিতই নয়, সংগীতের জগতেও স্বতন্ত্র একটি গায়নশৈলীর সৃষ্টি করেছে । তাঁর শিল্পচর্চা, চিত্রাঙ্কন, পাণ্ডুলিপির ভিতরের কাটাকুটি অপূর্ব শিল্পনিদর্শন হিসেবে দেশে বিদেশে নন্দিত ।


স্বদেশ ও সমাজভাবনা:

কেবল সাহিত্য ও শিল্প জগতেই নয়, শিক্ষাক্ষেত্রেও ‘ব্রয়চর্য বিদ্যালয়’, ‘বিশ্বভারতী’ ইত্যাদি শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে নব শিক্ষানীতির প্রবর্তন করেন রবীন্দ্রনাথ । কেবল তা-ই নয়, শান্তিনিকেতনের অদূরে শ্রীনিকেতনে তিনি কৃষি ও শিল্প বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দেশবাসীকে কৃষি ওশিল্পে আত্মনির্ভরতার উদ্বুদ্ধ করেন । তৎকালীন বৃটিশরাজ কর্তৃক জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংশ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যুত্তরে 'নাইট' উপাধি ত্যাগ করে তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন । এছাড়া বঙ্গভঙ্গ রদ করার উদ্দেশ্যে রাখিবন্ধন উৎসবের সূচনা করে, হলকর্ষণ, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি উৎসবের প্রচলন করে তিনি সমকালীন যুগধর্ম পালন করে গেছেন । আবার যখন আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেছে তখন তাঁর লেখনী গর্জে উঠে বলেছে- 'দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে ।' দেশের তৎকালীন স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এবং বিশ্বের মানবসভ্যতার উন্নয়নকল্পে তার রচিত প্রবন্ধগুলি জগঋবাসীকে একটি স্বতন্ত্র পথের দিশা দিয়েছে । যুদ্ধের বিরুদ্ধে ও বিশ্বশান্তির পক্ষে তার মন্তব্য ও ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে ।


জন্মজয়ন্তী:

তাঁর জন্মের দেড়শ’ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও তার আলোক-সামান্য প্রতিভার জ্যোতি এখনও সমস্ত মানব সমাজকে আলোকিত করে রেখেছে । তার বিশাল মনীষাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করার জন্য ভারত সরকার বর্ষব্যাপী রবীন্দ্রজয়ন্তীর পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এই উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের পিছিয়ে থাকার কোনো প্রশ্নই নেই । পশ্চিমবঙ্গ সরকারও বর্ষব্যাপী রবীন্দ্রচর্চা, আলোচনা সভা, রবীন্দ্রসংগীত, নাটক ইত্যাদি মঞ্চস্থ ও প্রচার করার মধ্যদিয়ে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন-উৎসব অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে । কেবল সরকারি স্তরেই নয়, বেসরকারি ভাবেও দিকে দিকে নানা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ষব্যাপী রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ মননের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৷


উপসংহার:

একদা রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক ।” বর্ষব্যাপী সমগ্র দেশজুড়ে তাঁকে স্মরণ করার মধ্যদিয়ে তিনি যে আমাদেরই অতি প্রিয় প্রাণের পুরুষ, একান্তরূপে আমাদেরই আত্মার আত্মীয় ছিলেন তা পরিস্ফুট হয়েছে । এই হিসেবে যথার্থ লোককবি রূপেও আমরা তাঁকে গ্রহণ করি ।


বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধরচনা পড়তে এখানে ক্লিক করুন


যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য । আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area