Ads Area


সার্ধশতবর্ষের আলোকে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রবন্ধ রচনা | Acharya Prafulla Chandra Roy Wrote Essays Light Of The Centenary

সার্ধশতবর্ষের আলোকে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রবন্ধ রচনা | Acharya Prafulla Chandra Roy Wrote Essays Light Of The Centenary

সার্ধশতবর্ষের আলোকে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রবন্ধ রচনা


ভূমিকা:

যে প্রখ্যাত মনীষী বিজ্ঞানচর্চার হাত ধরে সমগ্র ভারতবর্ষকে বিশ্বের দরবারে উন্নীত করে দিয়েছেন, তিনি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় । তিনি ছিলেন একাধারে জ্ঞানতাপস, স্বদেশপ্রেমিক, রসায়নবিদ, অধ্যাপক ও ভারতবর্ষে রাসায়নিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রথম ভারতীয় স্থপয়িতা । তাঁর মৌলিক গবেষণা ও আবিষ্কার বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসকে করেছে সমৃদ্ধ ।


জন্ম, বংশপরিচয় ও শিক্ষা:

বাংলাদেশের অন্তর্গত যশোহর জেলার বাড়ুলি গ্রামে (অধুনা খুলনা জেলার অন্তর্গত) ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ২ আগস্ট প্রফুল্লচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন । পিতা হরিশচন্দ্র রায় । দশ বছর বয়সে গ্রামীণ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে কলকাতার হেয়ার স্কুলে ভরতি হন; কিন্তু আমাশয় রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় দু-বছর বাড়িতেথাকেন । এরপর অ্যালবার্ট স্কুল থেকে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে এনট্রাস পাস করে মেট্রোপলিটন (বিদ্যাসাগর কলেজ) ও প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েন; বিএ পরীক্ষার আগেই গিলক্রাইস্ট বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিলেত যান এবং স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হন (১৮৮২ খ্রিস্টাব্দ), সেখান থেকে ডিএসসি ডিগ্রি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের 'হোপ' পুরস্কার পান । দেশে ফিরে ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজের রসায়ন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন এবং পরে প্রধান অধ্যাপক হন ।


গবেষণা ও আবিষ্কার:

প্রেসিডেন্সি কলেজে গবেষণার সময়ই (১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ) মারকিউরাস নাইট্রাইট নামে এক অজৈব লবণ আবিষ্কার করেন । এরপর আবিষ্কার করেন পারদের নাইট্রোজেন ঘটিত আরও কিছু যৌগ ও তাদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম । এ ছাড়া ধাতব ও অধাতব নাইট্রাইট যৌগের প্রস্তুতি ও ধর্মের ওপর তাঁর গবেষণাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । এজন্য তাঁকে ‘মাস্টার অব নাইট্রাইটস’ বলে অভিহিত করা হয় । মাখন, ঘি, চর্বি প্রভৃতি বস্তুর বিশুদ্ধতা পরীক্ষণের প্রণালীও তিনি আবিষ্কার করেন ।


সাহিত্য সাধনা:

প্রফুল্লচন্দ্র রচিত আত্মরচিত 'Life and Experiences of a Bengali Chemist' এবং ইংরেজি ও বাংলায় লেখা বহুবিধ প্রবন্ধাবলি তাঁর সাহিত্য সাধনার পরিচায়ক’ । বাংলায় লেখা ‘বাঙ্গালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার’ এবং ‘অন্নসমস্যায় বাঙ্গালীর পরাজয় ও তাহার প্রতিকার’ তাঁর অন্যতম উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ । প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনাকালে তিব্বত, বারাণসী, তাঞ্জোর প্রভৃতি স্থান থেকে প্রাচীন পুথি সংগ্রহ করে রচনা করেন ‘History of Hindu Chemistry” (১৯০২ ও ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ) । এই গ্রন্থে তিনি দেখান প্রাচীন হিন্দু রসায়ন বিজ্ঞান সমসাময়িক গ্রিক বিজ্ঞান থেকে কোনো অংশেই কম ছিল না । 


রসায়ন চর্চার পথিকৃৎ:

ভারতে রসায়নচর্চা ও গবেষণার পথ তিনিই উন্মুক্ত করেন । তাঁর উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয় রাসায়নিক দ্রব্য ও ওষুধ তৈরির কারখানা বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড’ (১৯০১ খিস্টাব্দ) । ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁরই প্রেরণায় ও অর্থসাহায্যে প্রতিষ্ঠিত হয় 'ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি' । শুধু তাই নয় বাংলাদেশে বিবিধ শিল্পোন্নতি বিধানে ও ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসারে তাঁর উৎসাহ ছিল অদম্য ।


স্বদেশপ্রেম:

প্রফুল্লচন্দ্র এক অর্থে ছিলেন খাঁটি দেশপ্রেমিক । স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী বীরদের প্রতি তাঁর গভীর সহানুভূতি ছিল । দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখের সাহচর্য তার সেই সহানুভূতিকে উপযুক্ত প্রকাশ ক্ষেত্র দান করেছিল । জাতীয় শিক্ষা এবং শিল্পোদ্যোগের প্রতি অকৃপণ সহায়তা এবং আপন অর্জিত অর্থ মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে বিতরণ তাঁকে দেশবাসীর চোখে বিশিষ্ট করে তুলেছে । ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির অসহযোগ আন্দোলনে খদ্দর প্রচারে তিনি ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা ।


সম্মানলাভ:

সারাজীবন বিজ্ঞান সাধনা ও বহুমুখী জনকল্যাণমূলক কর্মে নিরত থাকার জন্য তিনি বহুবিধ সম্মান লাভ করেন । ব্রিটিশ সরকারের সিআইই ও নাইট উপাধি ছাড়া দেশি-বিদেশি চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রি পান এবং লন্ডন ও মিউনিক বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানিত সদস্যরূপে গ্রহণ করে । ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে রাজসাহীতে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে এবং ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ভারতীয় বিজ্ঞান সভার তিনি ছিলেন মূল সভাপতি । ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে মিউনিক শহরের ‘ডয়টসে আকাডেমি’ ও ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে ‘কেমিক্যাল সোসাইটি’ তাকে সম্মানিত সভ্যরূপে নির্বাচিত করে । শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় অবনত দেশবাসী তাঁকে উপাধি দেয় ‘আচার্য’ ।


উপসংহার:

আজ এই মহান বিজ্ঞানীর সার্ধশতবর্ষ উপস্থিত । বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেই অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে । কিন্তু আমাদের ভুললে চলবে না আচার্যের সার্ধশতবর্ষ পালন তখনই সার্থকতা লাভ করবে যখন তাঁর চিন্তা-আদর্শ-নিষ্ঠা-মানবতাবাদকে আমরা অন্তর থেকে গ্রহণ করবো এবং তাঁর নির্দেশিত পথে অগ্রসর হতে পারবো ।


বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধরচনা পড়তে এখানে ক্লিক করুন


(যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য । আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো ।)

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area