রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Rabindranath Thakur Bangla Prabandha Rachana
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভূমিকা: কবির ইচ্ছা :
যে-কবি আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং প্রায় সত্তর বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন, সেই কবি আমাদের কাছে বসন্তদিনের অভিবাদন জানিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করে জানতে চেয়েছেন,
কে তুমি পড়িছ বসি
আমার কবিতাখানি
কৌতূহল ভরে!
রবীন্দ্রনাথের কবিতা ঘরে ঘরে :
বলা বাহুল্য, এখানে উল্লিখিত কবি হলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আমরা কবির এই কৌতূহল চরিতার্থ করতে যা জানাতে পারি, তা হল তাঁর কবিতা আজ সর্বজনের কাছে পঠিত হচ্ছে এবং কবিকে ঘিরে আমাদের অনুরাগ অসীম। এই বঙ্গভূমিতে কেবল নয়, কবি আজ সর্বত্র ব্যাপ্ত। তিনি আমাদের কাছে 'কবির কবি' এবং 'গানের রাজা'। এখন এককথায় কবিকে পেয়ে আমরা গর্বিত। বহু যুগের বহু সাধনায় এসব কবির জন্ম হয়।
এখন রবীন্দ্রনাথ কতখানি প্রাসঙ্গিক :
পৃথিবীতে এপর্যন্ত বহু কবি ও মনীষীর জন্ম হয়েছে। শেকসপিয়র, গেটে, হোমার, ভার্জিন, মিলটন প্রমুখ বহু কবি ও মনীষীর নাম আমরা উল্লেখ করতে পারি। এঁরা প্রত্যেকেই যে বিরাট, সেবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মধ্য দিয়ে মনীষার যে বিপুল ব্যাপ্তি, তা আর কারও ভেতর দেখা যায় না-রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার, অজস্র গানের স্রষ্টা, প্রাবন্ধিক এবং বিশ্বসেরা চিত্রকর। তাঁর রাজনৈতিক ভাবনা আজও আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক। তিনি ছিলেন আধুনিক শিক্ষা-ভাবনার পথিকৃৎ। এই শিক্ষা কীভাবে দিতে হবে, তা তিনি নিজের উদ্যোগে 'শান্তিনিকেতন' প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। পরাধীন ভারতবর্ষে তাঁর জন্ম। পরাধীন ভারতে তাঁর প্রতিভার বিকাশ। কিন্তু স্বাধীনতা ছিল তাঁর রক্তে রক্তে। তিনি ইংরেজ শাসনমুক্ত ভারতের স্বাধীন স্বরূপ অনেক আগে থেকেই আমাদের মনে এঁকে দিয়ে গেছেন এবং ভাবতে অবাক লাগে, তিনি তিনটি রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। এই তিনটি দেশ হল ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা।
তিনি ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় বাঙালি ঐক্যের গান রচনা করেছিলেন, কিন্তু তাঁর তিরোধানের পর যখন শাসক ইংরেজরা ১৯৪৭-এ ভারতবর্ষকে বিশেষত বঙ্গভূমিকে, দ্বিখন্ডিত করে দিয়ে চলে গেল, তখন মনে হল রবীন্দ্রনাথের ঐক্যের সাধনা একেবারেই ব্যর্থ হয়ে গেল। কিন্তু পরে দেখা গেল, তাঁর সাধনার কিছু ব্যর্থ হয় না, ভারত-বাংলাদেশকে আজ ঐক্যের বাঁধনে যিনি বেঁধে রেখেছেন, তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ। সুতরাং রবীন্দ্রনাথ যে আজও কতখানি প্রাসঙ্গিক তা চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে।
রবীন্দ্রজীবন কীভাবে গঠিত হল :
রবীন্দ্রজীবনে সাহিত্যপ্রতিভা এবং মনীষার বিকাশ কীভাবে ঘটেছে, তার কিছুটা এই ঠাকুর পরিবারে। বাবার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ। শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে ঠাকুর পরিবার তখন নবজাগরণের আলোকের দিশারি। যদিও রবীন্দ্রনাথ শৈশবে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, 'বেঙ্গল অ্যাকাডেমি'তে কিছুদিন পাঠ নিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর প্রকৃত শিক্ষা হয়েছিল নিজেদের পরিবারের পাঠশালায়। সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথকে ইংল্যান্ডে পাঠানো হয় ব্যারিস্টারি পড়তে। কিন্তু ব্যারিস্টারি পড়া শেষপর্যন্ত তাঁর হয়নি। ১৮৮৪-তে বাবার নির্দেশে কবি তাঁদের জমিদারি দেখভালের দায়িত্ব পান। এই সময় কবির সঙ্গে পদ্মলালিত বঙ্গদেশের পরিচয় হয়, যা কবির কাছে ছিল মহার্ঘ অভিজ্ঞতা। দেশ ও মানুষকে তিনি খুব কাছ থেকে চিনতে থাকেন এবং তাঁর যথার্থ কবিপ্রতিভার উন্মেষ হয়। তাঁর লেখা ছোটোগল্পগুলি বাংলার মাটির ফসল এবং তা এই অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া।
সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ :
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ যে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা চিরস্মরণীয় ও শাশ্বত। তাঁর উপন্যাস 'নৌকাডুবি', 'চোখের বালি', 'গোরা', 'রাজর্ষি', 'ঘরে বাইরে' আজও সমাদৃত ও পঠিত। তাঁর নাটক 'বিসর্জন', 'রাজা ও রানী','রক্তকরবী', 'ডাকঘর', 'অচলায়তন' ইত্যাদির সঙ্গে নৃত্যনাট্য 'শ্যামা', 'চিত্রাঙ্গদা', 'চণ্ডালিকা' প্রভৃতিও যথার্থ স্মরণীয়। বাংলা কবিতায় তাঁর দান অপরিসীম।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি :
বাংলা কবিতাকে তিনি উনিশ শতকের ভাববন্ধন এবং ভাষাবন্ধন থেকে মুক্ত করে আধুনিকতার বিশ্বসভায় পৌঁছে দিয়ে গেছেন। 'শ্রাবণী', 'সোনার তরী', 'চিত্রা', 'চৈতালী', 'কল্পনা' থেকে শুরু করে তিনি একের পর এক লিখে গেছেন, 'বলাকা', 'পূরবী', 'শ্যামলী', 'পুনশ্চ', 'আরোগ্য', 'নবজাতক', 'শেষলেখা' ইত্যাদি। 'গীতাঞ্জলি', 'গীতালি', 'গীতিমাল্য' থেকে সংকলিত কয়েকটি কবিতা। ইংরেজিতে অনুবাদ করে রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে বিখ্যাত 'নোবেল প্রাইজ' পান এবং কবিদের বিশ্বসভায় তাঁর অভিষেক হয়। তিনি ইংরেজদের কাছ থেকে এরপর 'নাইট' উপাধি পান।
উপসংহার :
রবীন্দ্রনাথ যে কেবল নিছক একজন কবি ছিলেন তা নয়। তিনি ছিলেন মনীষী, ছিলেন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। ছিলেন চিন্তানায়ক। তাই তাঁর মৃত্যুর সত্তর বছর পরেও তিনি প্রাসঙ্গিক এবং তাঁর দেড়শো বছরের জন্মবর্ষে তিনি আমাদের কাছে এখনও পথপ্রদর্শক। তাঁর জীবন আমাদের কাছে এক মহাজীবন। কৌতূহল ভরে তাই তাঁর কবিতাই কেবল আমরা পড়ছি না, তাঁর দেখানো পথ ধরেই আমরা হাঁটছি। আমাদের ধারণা, এই হাঁটা কোনোদিন শেষ হবে না।
আরও পড়ুন-