ভারতের জাতীয় সংহতি বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "ভারতের জাতীয় সংহতি" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের জাতীয় সংহতি বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Bharater Jaatiya Sanghati
ভারতের জাতীয় সংহতি
"জাতীয় সংহতি মিলনের সুরে
প্রগতির কথা বলে,
বিভেদ ভুলিয়া, হৃদয় মেলিয়া-
হাতে হাত ধরে চলে।"
ভূমিকা :
একটি জাতির উন্নতির মূল ভিত্তি জাতীয় সংহতি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে একটি দেশের প্রত্যেকটি মানুষ যদি এক মন্ত্রে দীক্ষিত হয়, যদি একসূত্রে গ্রথিত হয়ে সহস্র কোটি মন, তবেই দেখা দেবে জাতীয় সংহতি। তখন বিভেদ হ ভুলে হৃদয় মেলে সকলে সকলের হাতে হাত মিলিয়ে চলে-রচিত হয় মহামিলনের মানব শৃঙ্খল।
জাতীয় সংহতির স্বরূপ :
জাতীয় সংহতি হচ্ছে জাতির অর্থাৎ দেশের জনগণের আন্তরিক ঐক্যচেতনা বা ঐক্যানুভূতি। নানা ভাষা, নানা মত ও নানা পরিধানের বাধা সত্ত্বেও দেশে মিলনের ও ঐক্যবোধের চেতনার বিকাশ ঘটলে জাতীয় সংহতি গড়ে ওঠে। কোনো জাতির সব মানুষ যখন জাতিভেদের সীমা, ভৌগোলিক সীমা, অর্থসংগতির সীমা, সাম্প্রদায়িকতার সীমা, নানা বিশ্বাস ও সংস্কারের উপেক্ষা করে নিজেদের মধ্যে ঐক্যবোধ ও চেতনাকে জাগিয়ে তোলে, তখনই একসূত্রে সহস্র জীবন গ্রথিত হয়ে জাতীয় সংহতি গড়ে ওঠে। দেশের প্রতিটি মানুষ দেশের সবকিছুরই সমান অংশীদার ও অধিকারী, এই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জাগরণ, জাতীয় সংহতির পরিপোষক। এই দেশ, সমাজ-সংস্কৃতি সব কিছুর সঙ্গে আমার প্রাণের যোগ-এই বোধ জাতীয় সংহতি চেতনার এই দেশের সব মানুষের সঙ্গে আমার সহযোগিতা-সহাবস্থান ও সহমর্মিতার বন্ধন-এই চেতনা জাতীয় সংহতির দ্যোতক।
জাতীয় সংহতির পথে বাধা :
জাতীয় সংহতির পথের মূল বাধা হল: ১) ধর্মীয় আবেগ ও সাম্প্রদায়িকতা,২) জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা ও বর্ণ-বৈষম্য, ৩) বহু ভাষা এবং ভাষাগুলির প্রতি অবহেলা, ৪) সংকীর্ণ প্রাদেশিকতা এবং উপদলীয় কোন্দল, ৫) রাজনৈতিক দলাদলি ও উগ্র জাতীয়তাবাদ, ৬) জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ৭) অর্থনৈতিক অসাম্য।
জাতীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা :
জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন জনগণের মনে জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণ ঘটানো ও নিজের জাতি, জাতির ভাষা-সংস্কৃতি-ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে গর্ববোধের জাগরণ ঘটানো। এর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সঠিক লোকশিক্ষার বিস্তার। সেই সঙ্গে স্কুলে-কলেজে এবং প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেশ ও জাতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিকারী পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা প্রয়োজন। সার্বিক শিক্ষা প্রসারের দ্বারা জনগণের মনের সংকীর্ণ প্রাদেশিকতা-আঞ্চলিকতা ও সাম্প্রদায়িকতা বোধ দূর করে এবং বৃহত্তর জাতীয় চেতনা সৃষ্টি করতে পারলে জাতীয় সংহতি সুদৃঢ় হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষিত দায়িত্বশীল নাগরিকদের দায়িত্ব সর্বাধিক। সচেতন নাগরিকরাই জাতীয় সংহতির প্রয়োজনের দিকটিকে সকলের সামনে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করবেন ও তুলে ধরবেন। এ ব্যাপারে স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের দায়িত্বও অস্বীকার করা যায় না।
নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও সমাজসেবা :
দেশের অগণিত জনসাধারণের অজ্ঞতা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাব, ধর্মান্ধতা ও প্রাদেশিকতা হল জাতীয় সংহতির প্রধান বাধা। এগুলি দূর করতে সমাজসেবামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে জাতীয় চেতনা সৃষ্টি সম্ভব হবে। প্রয়োজনে সভাসমিতি করার কর্মসূচি গ্রহণ করে নানা বিষয় নিয়ে সুষ্ঠু আলোচনা করা যেতে পারে।
ঐতিহ্যের জাগরণ :
আমাদের ভারতবর্ষ হল বহু ভাষাভাষী, বহু ধর্মাবলম্বী এবং বহু বিচিত্র জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত মানুষের বসবাসের দেশ। এখানে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য যেমন অফুরন্ত, তেমনি অফুরন্ত মানুষের বৈচিত্র্য। জাতীয় সংহতির নামে ওই বৈচিত্র্যকে কখনও জোর করে মুছে দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের উদ্দেশ্য হবে, 'Unity in diversity'-বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য তৈরি করাই হল আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। সকলের বৈশিষ্ট্যকে বজায় রেখেই তৈরি করতে হবে জাতীয় সংহতি।
"মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা,
মঙ্গলঘট হয়নি-যে ভরা,
সবার পরশে পবিত্র-করা তীর্থ-নীরে,
আজি ভারতের মহা-মানবের সাগরতীরে।”
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)