Ads Area


ক্ষয়চক্র কাকে বলে || ক্ষয়চক্র MCQ প্রশ্ন উত্তর || ডেভিসের ক্ষয়চক্র

ক্ষয়চক্র কাকে বলে || ক্ষয়চক্র MCQ প্রশ্ন উত্তর || ডেভিসের ক্ষয়চক্র

শ্রদ্ধেয় বন্ধুরা, আজকে তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম ভূগোলের ক্ষয়চক্র নিয়ে। ক্ষয়চক্র কাকে বলে? স্বাভাবিক ও শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্র, ক্ষয়চক্র MCQ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করছি যেগুলি তোমাদের সমস্ত রকম ভূগোল পরীক্ষা এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য খুব কাজে লাগবে।

স্বাভাবিক ও শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্র

ভূমিকা (Introduction)

প্রত্যেক ভূমিরূপের একটি নির্দিষ্ট জীবন ইতিহাস আছে, যার মধ্য দিয়ে ভূমিরূপের এক সুশৃঙ্খল, পর্যায়ক্রমিক ও শ্রেণিবদ্ধ পরিবর্তনের সলো ভূমিরূপটির বিবর্তন ঘটে থাকে। এই বিবর্তনে ভূমিভাগ প্রারম্ভিক অবস্থা থেকে ধারাবাহিকভাবে ভূমিরূপ-সৃষ্টির মধ্য দিয়ে অস্তিম অবস্থায় পৌঁছায়।

ক্ষয়চক্র কাকে বলে?

উত্থিত কোনো ভূমিভাগের ক্ষয়কার্যের ফলে প্রাথমিক অবস্থা থেকে নির্দিষ্ট রুম (order) অনুসারে কতকগুলি অন্তবর্তী পর্যায়ের (Stage) মধ্য দিয়ে শেষ অবস্থায় (সম প্রায় ভূমিতে পৌঁছানোকে, অর্থাৎ, ক্ষয়ের নিম্নসীমায় পৌঁছানোকে ক্ষয়চক্র বলে।

স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র (Normal Cycle of Erosion):

ক্ষয়চক্রের ধারণাটি সর্বপ্রথম প্রবর্তন করেন আমেরিকার ভূগোলবিদ উইলিয়াম মরিস ডেভিস (W.M. Davis)। তিনি 1884-1899 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাঁর ক্ষয়চক্রের মডেলটির বিকাশ ঘটান।

ভূপৃষ্ঠের প্রায় 70 শতাংশ ভূমির ভাস্কর্য প্রধানত নদীর স্বাভাবিক ক্ষয় কার্যের মাধ্যমে ঘটে থাকে। তাই একে স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র বা নদী-চক্র (Fluvial Cycle of Erosion) বলা হয়।

এটি সম্পূর্ণ হাতে দীর্ঘ সময় লাগে। তবে ক্ষয়চক্র চলাকালীন ভূ-অভ্যন্তরীণ শক্তি এই ক্ষয়চকে বিঘ্ন ঘটিয়ে নতুন ক্ষনাচক্রের সূচনা করতে পারে।

ক্ষয়চক্রের বিভিন্ন অবস্থা (Different Phases of Cycle of Erosion):

ডেভিসের মতে, কোনো অঞ্চলের ভূমিরূপের উদ্ভব সেই অঞ্চলের শিলার গঠন (Structure), ক্ষয়কার্যের প্রক্রিয়া (Process) ও সময় বা পর্যায় (Time or Stage) -এই তিনটি প্রধান উপাদানের ওপর নির্ভরশীল (....... Landscape is a function of structure, process and stage)। শিলার গঠন বলতে শিলার নতি, আরাম, কাঠিন্য অর্থাৎ ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা, দারন, ফাটল, জোড়মুখ প্রভৃতিকে একসঙ্গে বোঝায়। বর্হিজাত কিছু কিছু প্রাকৃতিক এজেন্ট আছে যারা ধর্ষণ, অবঘর্ষ, প্রবণ, উৎপাটন প্রভৃতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমির ক্ষয় করে থাকে।

ভূমিরূপের ধারাবাহিক পরিবর্তনে ভূভাগের যেসব পৃথক বৈশিষ্ট্য গড়ে ওঠে, সেগুলিকে শ্রেণিবন্ধ করার জন্য ডেভিস ক্ষয়চক্রকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন, যথা- যৌবন (Youth), গণিত (Maturity) ও বার্ধক্য (Old)।

ডেভিসের ক্ষয়চক্রের শর্তাবলি (Preconditions of Devisian Cycle of Erosion)

1. ভূ-আলোড়নের প্রভাবে কোনো ভূভাগ সমুদ্রপৃষ্ঠের সাপেক্ষে উত্থিত হবে এবং ভূভাগের শিলার গঠন, স্তরায়ন, শিলালক্ষণ, ভূমির উচ্চতা বা বন্ধুরতা ইত্যাদি বিষয়গুলি প্রাধান্য পাবে অর্থাৎ এটি একটি ভূতাত্ত্বিক একক (geological unit) হিসাবে অবস্থান করবে।

2. ভূমিভাগের ভূতাত্ত্বিক গঠন হবে - সরল ও একই প্রকার শিলালক্ষণযুক্ত। পর পর কঠিন ও কোমল শিলায় সজ্জিত হবে এবং প্রাথমিক ঢাল হবে সমুদ্রমুখী।

3. ক্ষয়চক্র চলাকালীন ভূমিভাগ অনড় অবস্থায় বা পিতাকথায় থাকবে।

4. অঞ্চলটি আর্দ্র জলবায়ুর অন্তর্গত হবে, যেখানে বিভিন্ন নদীগোষ্ঠীর উদ্ভব হবে ও নদীর জন্য প্রাধান্য পাবে।

আরও পড়ুন: ক্ষয়চক্র গঠন ও প্রক্রিয়া MCQ প্রশ্ন উত্তর

5. সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূমির উত্থান প্রায় উল্লম্ব হবে এবং এর হার এত দ্রুত হবে যে, উত্থান কাজ শেষ হওয়ার আগে ভূমিভাগ বিশেষ ক্ষয়প্রাপ্ত হবে না।

6. ভূমিরূপের বিবর্তন একটি নির্দিষ্ট ক্রম বা পর্যায় অনুসারে ঘটতে থাকবে।

7. ক্ষয়ের শেষসীমা (Base Level of Erosion) পর্যন্ত নদী নিম্নক্ষয় করতে থাকবে।

8. নদীর ক্ষয়, আবহবিকার পুঞ্জিত স্খলন প্রভৃতি বহির্জাত প্রক্রিয়াগুলি -একযোগে ভূমিরূপের বিবর্তনে অংশগ্রহণ করবে। উত্থিত ভূমিভাগ সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হবে।

9. ক্ষয়চক্র আংশিক সম্পন্ন হওয়ার পর ভূমির পুনরায় উত্থান ঘটলে একটি নতুন ক্ষয়চক্রের সূচনা হবে।


ক্ষয়চন্দ্র মডেলের ব্যাখ্যা (Explanation of the Model of Cycle of Erosion)

ডেভিস তাঁর ক্ষয়চক্রের ধারণাটি একটি চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করেছেন। চিত্রে অনুভূমিক অক্ষ সময় ও উল্লঙ্গ অক্ষ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতাকে প্রকাশ করে। ভূমিভাগের উত্থানের পর ক্ষয়কাজ শুরু হয়। সমগ্র প্রক্রিয়াটিকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। যথা- যৌবন, প্রৌঢ় ও বার্ধক্য। ক্ষয়চক্রের বৈশিষ্ট্য নীচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল-

ক্ষয়চন্দ্র মডেলের ব্যাখ্যা

যৌবন অবস্থা (Youth Stage) - ভূমিভাগের উত্থান পর্ব শেষ হওয়ার ঠিক পর থেকেই যৌবন অবস্থা শুরু হয় এবং নদী ক্ষয় করতে শুরু করে। এই পর্যায়ে ভূমিভাগ যেসব বৈশিষ্ট্য লাভ করে, সেগুলি হল-

1. এই পর্যায়ে ভূমির প্রারম্ভিক ঢাল অনুযায়ী কয়েকটি অনুগামী নদী ও উপনদী সৃষ্টি হয়। উপনদীগুলি মস্তক ক্ষয়ের (Headward) Erosion) মাধ্যমে প্রসারিত হয় ও বৃক্ষরূপী নদীব্যবস্থা গড়ে তোলে।

2. সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ভূমির উচ্চতা সবচেয়ে বেশি হওয়ায় নদী নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে উপত্যকাকে গভীর করে ও সংকীর্ণ আকৃতির উপত্যকা গঠন করে।

3. এই পর্যায়ে প্লাবনভূমি সাধারণত সৃষ্টি হয় না। তবে প্রধান নদী উপত্যকায় প্লাবনভূমি থাকতেও পারে। নদীর দুই পাড় অত্যন্ত খাড়া হয়।

4. দুটি অনুগামী নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল প্রশস্ত থাকে। এই অংশে জলনিকাশি ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয় বলে হ্রদ, জলাভূমি ইত্যাদি। কখনো কখনো গড়ে ওঠে।

5. পর্যায়ক্রমে কঠিন ও কোমল শিলাস্তরের অবস্থানের জন্য প্রধান নদী বরাবর জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। পরিণত অবস্থা লাভের পূর্বে জলপ্রপাত অন্তর্হিত হয় ও নদীবক্ষ পর্যায়িত (Graded) অবস্থায় আসে। 

6. দুটি নদীর মধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ অংশ নদীর গভীরীকরণ ও প্রশস্তকরণের জন্য ক্রমশ সংকীর্ণ ও তীক্ষ্ণ হতে থাকে। এই পর্যায়ের শেষে অবস্থায় তীক্ষ্ণ জলবিভাজিকার শীর্ষদেশে আদি শিলার অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়।

7. যৌবনে নদীবাহিত বোল্ডার অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় নদীগর্ভে মন্থরূপের সৃষ্টি করে। ফলে, নদীখাত দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

8. নদীর নিম্নক্ষয়ের কারণে শৈলশিরার শীর্ষদেশ ও উপত্যকার তলদেশের মধ্যে আপেক্ষিক উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।

ক্ষয়চক্র বিভিন্ন পর্যায়ের ভূমিরূপ


পরিণত বা প্রৌঢ় অবস্থা (Mature Stage):

ক্ষয়কার্যের ফলে ভূমিভাগের উপর উত্থানপর্ব চলাকালীন চিহ্নসমূহ যখন প্রায় একেবারে মুছে যায়, তখন ভূমিরূপ পরিণত বা প্রৌঢ় অবস্থা লাভ করে। এ- সময়ে জলবিভাজিকাগুলির মম্ভক অংশ তীক্ষ্ণ হয় এই অবস্থায় নদী- উপত্যকা অঞ্চলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভূমিরূপ গড়ে ওঠে -

1. পরিণত অবস্থায় জলবিভাজিকার শীর্ষদেশ সুতীক্ষ্ণ হয়।

2. মদ্ভব ক্ষয়ের মাধ্যমে উপত্যকার বিস্তৃতি ঘটে এবং নিম্নগ্ধ শিলাস্তরের সঙ্গে নদীর সামঞ্জস্য বিধান সুসম্পন্ন হয় সেই সঙ্গো নদীর জলবিন্যাস সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

3. পরিণত অবস্থার প্রথম ভাগে সম্ভাব্য স্থানীয় উচ্চতা সবচেয়ে বেশি থাকে।

4. পরিণত অবস্থায় ঢাল মসৃণতা লাভ করায় পূর্বেকার জলপ্রপাত, হ্রদ, জলাশয় প্রভৃতি অন্তর্হিত হয়।

5. প্লাবনভূমি উপত্যকার অধিকাংশ স্থান জুড়ে বিস্তৃত থাকে।

আরও পড়ুন: ভূ-গাঠনিক প্রক্রিয়া প্রশ্ন উত্তর

6. প্লাবনভূমির প্রশস্ততার জন্য নদীবীকের বিস্তার বেশি হয় এবং সহজেই তারা প্লাবনভূমিতে তাদের স্থান পরিবর্তন করতে পারে। এই অবস্থায় নদীবাঁকের দৈর্ঘ্য উপত্যকার আড়াআড়ি দৈর্ঘ্য অপেক্ষা কম হয়।

7. প্রধান নদীর অনুদৈর্ঘ্য ঢাল ভারসাম্য স্তরে (Profile of Equilibrium) পৌঁছায়। তবে উপনদীগুলি পর্যায়িত অবস্থায় নাও আসতে পারে।

8. পরিণত অবস্থায় ভূমির ব্যবচ্ছিন্নতার মাত্রা সবচেয়ে বেশি হয়। ফলে, ঢালু ভূমির উপস্থিতি উপত্যকা ও উচ্চভূমির চেয়ে বেশি হয় থাকে।

9. পরিণত অবস্থার শেষদিকে নদীর প্রশস্তকরণের মাত্রা নিম্নক্ষয়ের তুলনায় বেশি হয়।


বার্ধক্য অবস্থা (Old Stage):

উপত্যকার নিম্নক্ষয় বন্ধ হওয়ার সময় থেকে বার্ধক্য অবস্থা শুরু হয়। এই পর্যায়ে পার্শ্বক্ষয় ও উপত্যকার প্রশস্তকরণ চলতে থাকে ও উপত্যকার নিম্নশ্চয় বন্ধ হয়ে যায়। জলবিভাজিকাগুলি দ্রুতক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ফলে, চরম উচ্চতাহ্রাস পায়। নিম্নশ্চয় বন্ধ হওয়ার কারণে স্থানীয় বা আপেক্ষিক উচ্চতা হ্রাস পায়। এই সময় উপত্যকাসমূহ প্রায় সমতল হয়। এই পর্যায়ে ভূ- ভাগের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

1. এই পর্যায়ে নদীর সংখ্যা সাধারণভাবে পরিণত অবস্থার থেকে কম, কিন্তু যৌবন অবস্থার থেকে বেশি থাকে।

2. উপত্যকাগুলি- অত্যন্ত প্রশস্ত ও মৃদু ঢালমুক্ত হয়।

3. সুপ্রশস্ত প্লাবনভূমির সৃষ্টি হয়, যার ওপর দিয়ে নদী সাপের ন্যায় আঁকাবাঁকাভাবে ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়।

4. নদী মধ্যবর্তী জলবিভাজিকাগুলির উচ্চতা এত দ্রুত হ্রাস পায় এবং এতঅস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে তাদের অস্তিত্বঠাহর করা কঠিন হয়ে ওঠে।

5. উপত্যকা খুব বেশি প্রশস্ত হয়। এ সময়ে নদী- বাঁকের বিস্তার অপেক্ষা প্লাবনভূমি যথেষ্ট প্রশস্ত ও বড়ো হয়।

6. প্লাবনভূমিতে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, জলাভূমি প্রভৃতি দেখা যায়।

7. শিলা তথা ভূমির নগ্নীভবনে পুঞ্জিত স্খলন ও আবহবিকার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

8. বিস্তীর্ণ অঞ্চল ক্ষয়সীমা (Base level of Erosion) বা তার নিকট অবস্থান করে এবং সৃষ্টি করে বৈচিত্র্যহীন সমপ্রায় ভূমির (Perreplain)। সমগ্ৰায় ভূমির যেখানে সেখানে ক্ষয়- প্রতিরোধী শিক্ষায় গঠিত স্বল্প উচ্চতাবিশিষ্ট টিলা বা পাহাড় দেখা যায়। এ ধরনের পাহাড় বা টিলাকে মোনাড়নক (Monadnock) বলে। এটি সমগ্ৰায় তৃভাগে কিছুটা বৈচিত্র্যের চিহ্ন রাখে। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গালুড়িতে অবস্থিত পাট মাহুলিয়া| বোনানকের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

ক্ষয়চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ের ভূমিরূপ


সমালোচনাঃ ডেভিস প্রবর্তিত ক্ষয়চক্র নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে।

1. ডেভিস প্রবর্তিত দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়চক্র সম্পূর্ণ হতে পারে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। এটি সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে ভূমির উত্থানের ফলে ক্ষয়চক্র বিঘ্নিত হতে পারে।

2. ডেভিসের মত অনুযায়ী, ভূমির উত্থানপর্বে ক্ষয়কার্যের হার অতি নগণ্য এবং প্রকৃত পক্ষে তা শুরু হয় উত্থানপর্ব শেষ হলে কিছু বাস্তবে তা অসম্ভব।

3. ডেভিস ভূমির দ্রুত উত্থানের কথা বলেছেন। কিন্তু পাতসংস্থান তত্ত্ব অনুযায়ী এটি ধীর গতিসম্পন্ন।

4. ডেভিসের মত অনুযায়ী, ক্ষয়চক্র সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ভূমিভাগ সুস্থির অবস্থায় থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নাও হতে পারে।

আরও পড়ুন: ভূগোলের প্রশ্ন ও উত্তর

5. ডেভিস সময়ের ওপর যে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, পেঙ্কের মতে তা অমূলক। ডেভিসের ক্ষয়চক্র কঠোরভাবে সমালোচিত হলেও এর কতকগুলি উল্লেখযোগ্য দিক আছে। যেমন-

i. ডেভিসই সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ক্ষয়চক্রের ধারণাটি ব্যাখ্যা করেন।

ii. তাঁর মডেলটি অতি সরল এবং ভূমিরূপ বিশ্লেষণে ও শ্রেণিবিন্যাসে অত্যন্ত প্রায়োগিক। তিনি অতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ভূমিরূপ বিবর্তনের হার পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তাকে সহজ ও স্বাচ্ছ ভাষায় উপস্থাপিত করেছেন।

iii. বর্তমান দিনের ভূতাত্ত্বিক চিন্তাভাবনার সঙ্গে তাঁর মতবাদ সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ ভারসাম্য রেখাচিত্র, ক্ষয়ের শেষসীমা ইত্যাদি ধারণাগুলিকে তিনি তাঁর মডেলে সংযোজন করেছেন।


শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্র (Arid Cycle of Erosion)

ভূমিকা (Introduction)

একধরনের ভূমিরূপ দেখা শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্র সাধারণত মরুভূমি অঞ্চলেই দেখা যায়। ডব্লু . এম . ডেভিস প্রথম এই ক্ষয়চক্র সম্বন্ধে ধারণা দেন। তাঁর মতে, শুষ্ক অঞ্চলের ভূমিরূপ মূলত আবহবিকার, প্রবহমান জল ও বায়ুর সম্মিলিত কাজের ফলে উৎপন্ন হয়। তাই, শুষ্ক অঞ্চলে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রবহমান জলধারা শুষ্ক অঞ্চলে বড়ো আকারের (Macroscopic) ভূমি সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে। পরবর্তী পর্যায়ে, যখন বৃষ্টিপাত্র ক্রমশ কমতে থাকে এবং প্রবহমান জলের অভাবে ভূ- দৃশ্যাবলির ক্ষয়ের মাত্রা হ্রাস পেতে থাকে, তখন ভূমিরূপ- বিবর্তনে বায়ু প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে। এই ক্ষয়চক্রও তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। এ সম্বন্ধে নীচে আলোচনা করা হল।

প্রারম্ভিক পর্যার:

জলপ্রবাহ জনিত ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে যৌবন অবস্থা শুরু হয়। এই পর্যায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

1. ভূমির প্রারম্ভিক উত্থানে কতকগুলি পর্বতবেষ্টিত অববাহিকা সৃষ্টি হয়, যার প্রত্যেকটিতে কেন্দ্রমুখী অনুগামী নদী উৎপন্ন হয়।

2. প্রায় প্রতিটি অববাহিকার তলদেশ কার্যকরীভাবে ক্ষয়ের শেষ সীমা হিসাবে কাজ করে।

3. অতিরিক্ত বাষ্পীভবনের ফলে পৃষ্ঠ প্রবাহ কমে যায় ও বহু নদী অববাহিকার ঢালে শীর্ণকায় হয়ে পড়ে অথবা শুকিয়ে যায়।

4. এই অবস্থায় কেবলমাত্র বর্ষা ঋতুতে অথবা অস্বাভাবিক প্লাবনের ফলে অববাহিকাগুলির মধ্যস্থলে জল সজ্জিত হয়ে একটি ক্ষণস্থায়ী হ্রদ সৃষ্টি হয়। এই হ্রদ প্লায়া (Playa) নামে পরিচিত।

শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ের ভূমিরূপ

যৌবন পর্যায়:

পর্বতগুলিতে ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট কয়জাত পদার্থসমূহ মধ্যভাগের অববাহিকায় সজ্জিত হওয়ার মধ্য দিয়ে যৌবন অবস্থা শুরু হয়। যৌবন অবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

1. ক্ষয়কার্যের প্রথম অবস্থায় ক্ষণস্থায়ী অনুগামী নদী পর্বতের ঢালে র‍্যাভাইন বা V আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি করে।

2. ক্ষষিত পদার্থ পর্বতের ঢাল বরাবর নেমে এসে উপত্যকা বক্ষে জমা হতে শুরু করলে উপত্যকার সামনে পলিগঠিত ত্রিকোণাকার ভূমি গড়ে ওঠে। এ ধরনের ভূমিরূপকে পলল শঙ্কু (Alluvial cone) বলে অধিকাংশ নদী ওই বালুকাময় পলল শঙ্কুর মধ্যে হারিয়ে যায়।

3. মস্তক ক্ষয়ের ফলে নদীগ্রাস হয়।

4. উপত্যকার তলদেশে অনুস্রাবিত জল (Seepage water) একত্রিত হলে ওই স্থানে প্রায়া হ্রদ গঠিত হয়। নদীগুলি হ্রদ পর্যন্ত প্রবাহিত হলে বাহিত পলি প্লায়ার মধ্যে সজ্জিত হয়।

5. অস্থায়ী হ্রদের জল বাষ্পীভূত হয়ে গেলে হ্রদের প্রাস্তভাগ জুড়ে লবণের সঞ্চয় ঘটে।

6. বাষ্পীভবনের ফলে হ্রদ পর্যাক্রমে শুষ্ক ঋতুতে শুকিয়ে গেলে এবং বর্ষায় প্লাবিত হলে এর বক্ষে ক্রমশ পলি ও লবণ সঞ্চয় হতে থাকে। এরপর বায়ুর কার্য সক্রিয় হয়।

7. পলিভরতি প্লায়ার মধ্যে গর্ত তৈরি হয়। একে বায়ুতাড়িত গর্ত (Deflation hollow) বলে। তবে পুরু লবণের স্তর থাকলে এ ধরনের পার্শ্ব তৈরি হতে পারে না।

8. বালিরাশি বায়ু তাড়িত হয়ে উপত্যকায় যেখানে সেখানে বালিয়াড়ি গঠন করে। স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের যৌবন অবস্থায় নির্মক্ষার ফলে ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু শুষ্ক অঞ্চলে উচ্চভূমির ক্ষয় ও ওই ক্ষয়িত পদার্থ দিয়ে উপত্যকা ভরটি একসঙ্গে হয়। সার্বিকভাবে ভূমির উচ্চতা হ্রাস পায়।

পরিণত অবস্থা: বায়ুর কাজ বেশি প্রাধান্য পেলে পরিণত অবস্থা শুরু হয়। বৃষ্টিপাত ও ভূমিঢাল হ্রাস পায় বলে পরিণত অবস্থার শুরুতে জলপ্রবাহ দ্বারা ভূমির নগ্নীভবন (Denudation) প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে যৌবন থেকে পরিণত অবস্থায় ক্ষয়চক্রের অগ্রগতি অতি তিতে সম্পন্ন হয়। ক্ষয়চক্রের প্রারম্ভে যখন বায়ুর কাজের প্রাধান্য সক্রিয় ছিল, তা এই সময় প্রাধান্য বিস্তার করে। এই অবস্থায় নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায়। যথা-

শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের পরিণত অবস্থা

1. ক্ষয়ের মাধমে পর্বতের পশ্চাদপসারণ ঘটতে থাকে।

2. জলবিভাজিকাগুলি আরও তীক্ষ্ণ হয় এবং মধ্যবর্তী অববাহিকাগুলি প্রশান্ত হয় উপত্যকা ভরাটের ফলে এরা উঁচু হতে থাকে।

3. পিছু হটতে থাকা পর্বতের পাদদেশ থেকে উপত্যকা পর্যন্ত মৃদু ঢালযুক্ত সমভূমির সৃষ্টি হয়। এরা বিস্তৃত হয়ে প্রায়া সমভূমিতে মিশে যায়।

4. পর্বত পাদদেশীয় এই ঢাল দুটি অংশে বিভক্ত। ঢালের নিম্নাংশে পর্বত থেকে নদী দ্বারা বিধৌত নুড়ি, কাঁকর, বলি ইত্যাদি সৃষ্ট পলল শঙ্কগুলি একত্রিত হয়ে পলিগঠিত সমভূমি গঠন করে। একে বাজাদা (Bazada) বলে।

5. বাজাদার বহিঃসীমানা প্লায়ার লবণ ও পলি দ্বারা ঢাকা থাকে। ঢালের ঊর্ধ্বাংশে নগ্ন ভূমিশিলা (Bedrock) থাকে বা এর উপর পলির পাতলা আন্তরণ থাকে। একে পেডিমেন্ট (Pediment) বলে।

6. যৌবন অবস্থায় নদীগ্রাস ঘটার পর এই পর্যায়ে নদীগুলি একত্রিত হয়ে যায় এবং এর ফলে নিম্নক্ষয় করার পৃথক পৃথক শেষ সীমার পরিবর্তে একটিমাত্র সাধারণ ক্ষয়সীমা অঞ্চলটির ক্ষয়কার্যকে নিয়ন্ত্রিত করে।

7. পর্বতগুলি প্রাপ্ত হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে। এইরূপ পর্বতকে ইনসেলবার্জ (Inselberge) বলে।


বার্ধক্য অবস্থা-  যখন জলের কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এবং কেবলমাত্র বায়ুর কাজ চলে, তখন থেকে বার্ধক্য অবস্থা শুরু হয় এই অবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

1. বার্ধক্যের অন্তিম পর্যায়ে উচ্চভূমি অত্যধিক মাত্রায় নগ্নীভূত হয়। কিন্তু কোনো কোনো স্থানে ক্ষয় প্রতিরোধী কঠিন শিলা চারপাশের পেডিমেন্ট ও বাজাদার মাঝে দ্বীপের মতো অবস্থান করে। এটি ইনসেলবার্জ নামে পরিচিত। এই অবস্থায় বায়ু খুব সক্রিয়া হয়।

2. বায়ুসৃষ্ট গর্ত ও বালিয়াড়ির সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।

3. প্লায়ার প্রায় সমস্ত পলি বায়ুতাড়িত হয়ে উড়ে যায় ও অন্যত্র লোয়েশ সমভূমি গঠন করে।

4. অবশেষে ক্ষয়িত পদার্থসমূহ সম্পূর্ণরূপে অপসৃত হওয়ার পর মরু সমভূমি প্রারম্ভিক সর্বনিম্ন অববাহিকা অপেক্ষা আরও নীচু তলে অবস্থান করে।

5. এই অঞ্চলে স্থায়ী ভৌম জলপ্তর ক্ষয়ের শেষ সীমা নির্দেশ করে। এই শেষসীমার নীচে বায়ু কোনোপ্রকার ক্ষয় করতে পারে না।

6. সমগ্র অঞ্চল জুড়ে পদার্থের পাতলা আস্তরণযুক্ত শিলাময় সমপ্রায় তুমি (Rock floor) বিরাজ করে, যা পেডিপ্লেন (Pediplain) নামে পরিচিত। এই অবস্থা ততক্ষণ চলতে থাকে, যতক্ষণ না ভূমির পুনরুত্থান। ঘটে, অথবা, জলবায়ুর পরিবর্তনে (অর্থাৎ, শুষ্ক জলবায়ু থেকে আর্দ্র জলবায়ুতে পরিবর্তন) নতুন কোনো ক্ষয়চক্রের সূচনা হয়।

শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য অবস্থা

সমালোচনা- ডেভিসের শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্র ধারণাটি কেবলমাত্র আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমের পর্বতবেষ্টিত মরু অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য মধু জলবায়ু অঞ্চলের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। এই জন্য ডেভিসের শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্র মতবাদ সর্বজনগ্রাহ্য় নয়।

কিং-এর পাদ সমতলীকরণ মতবাদ (Theory of Pediplanation)

L.C.King দক্ষিণ আফ্রিকার বিস্তীর্ণ মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলের ভূমিরূপ পর্যবেক্ষণ করে, 1948 খ্রিস্টাব্দে ভূমিরূপ বিবর্তন সম্পর্কিত পাদ সমতলীকরণ মতবাদ প্রকাশ করেন। কিং-এর মতে ভৃগুর সমান্তরাল পশ্চাৎ অপসরণের ফলেই পাদসমভূমি গঠিত হয়। পর্যায়ক্রমে যৌবন, প্রৌঢ় ও বার্ধক্যের মধ্য দিয়ে মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে পাদসমভূমি গঠিত হয়।

যৌবন পর্যায় ( Youth Stage): পূর্ববর্তী পাদভূমির উত্থানের মধ্যদিয়ে মরু বা মরুপ্রায় অপালের ক্ষাচক্র শুরু হয়। ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ওই অঞ্চলের নদী গুলি দ্রুত নিম্নক্ষয় করে খাড়া পাড় বিশিষ্ট উপত্যকার সৃষ্টি করে। পরবর্তীকালে নিম্নক্ষয়ের মাত্রা করে এলে খাড়া ঢালের সর্বত্র সমানভাবে আবহবিকার হয় এবং খাড়া চালের পশ্চাৎ অপসরণ ঘটে। ফলে এর সামনে এক সমতল পৃষ্ঠের সৃষ্টি হয়। একে পেডিমেন্ট বলে। পেডিমেন্টের প্রসার ঘটলে দুই মধ্যবর্তী জলবিভাজিকা সংকীর্ণ হয়ে খাড়া ঢাল বিশিষ্ট পাহাড়ের রূপ ধারণ করে। এদের ইনসেলবার্জ বলে। গোলাকার ইনসেলবার্জকে বোর্নহার্ডট বা ক্যাসল কোপিজ বলে।

পরিণত পর্যায় (Mature Stage): এই পর্যায়ে নদী তার নিম্নক্ষয়ের ক্ষমতা হারায় এবং পেডিমেন্টগুলি অধিক মাত্রায় বিস্তৃত হয়। কিছু কিছু ইনসেলবার্জ এই পর্যায়ে অবলুপ্ত হয়। ফলে, ইনসেলবার্গের উভয় দিকের পেডিমেন্ট সংযুক্ত হয়ে এক বিস্তীর্ণ সমভূমি বা পেডিপেন সৃষ্টি হয়।

বার্ধক্য পর্যায় (Old Stage): এই পর্যায়ে অধিকাংশ ইনসেলবার্জ অবলুপ্ত হয়। ভূমির বন্ধুরতা তেমন থাকে না। একাধিক পেডিপ্লেন সংযুক্ত হয়ে অসংখ্য অবতল ঢালযুক্ত বিস্তীর্ণ পেডিপ্লেনের সৃষ্টি হয়।


স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র ও মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের তুলনা

তুলনার বিষয় স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্র
প্রারম্ভিক পর্যায় সমুদ্রবক্ষের উত্থানের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের শুরু হয়। পূর্ববর্তী পাদভূমির উত্থানের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের ক্ষয়চক্র শুরু হয়।
জলবায়ু অঞ্চল আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রে সম্পন্ন হয়। শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চলে মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্র সম্পন্ন হয়।
ভূমিরূপ স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রে নদীর কাজই প্রাধান্য লাভ করে। মরু অঞ্চলে ভূমিরূপ বিবর্তনে আবহবিকার, পুঞ্জিত স্খলন, জলধারা ও বায়ু মিলিতভাবে কাজ করে।
যৌবন পর্যায়ে ভূমির উচ্চতা স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রে যৌবন পর্যায়ে ভূমির আপেক্ষিক উচ্চতা বাড়ে। মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্রে যৌবনে ভূমির আপেক্ষিক উচ্চতা বৃদ্ধির পরিবর্তে কমতে থাকে।
বন্ধুরতা পরিণত পর্যায়ে ভূমির বন্ধুরতা বৃদ্ধি পায়। যৌবন পর্যায়ে ভূমির বন্ধুরতা সবচেয়ে বেশি থাকে।
অস্তিম পর্যায়ে সৃষ্ট ভূমিরূপ স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের শেষ পর্যায়ে সমপ্ৰায় সৃষ্ট ভূমি (পেনিপ্লেন) ও মোনাজনক সৃষ্টি হয়। মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের শেষ পর্যায়ে পেডিপ্লেন ও ইনসেলবার্জ সৃষ্টি হয়।
ক্ষয়চক্রের শেষ সীমা সমুদ্র পৃষ্ঠ স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের শেষ সীমা। ভৌমজলতল মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের শেষ সীমা।

পেডিমেন্ট ও বাজাদার মধ্যে পার্থক্য

পার্থক্যের বিষয় পেডিমেন্ট বাজাদা
নামকরণ পেডিমেন্ট দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। ‘পেডি’ শব্দের অর্থ পাদদেশ এবং ‘মেন্ট' শব্দটি এসেছে মাউন্ট থেকে, যার অর্থ পাহাড়। সাধারণ অর্থে পেডিমেন্ট কথার অর্থ হল পাহাড়ের পাদদেশের সমভূমি। পেডিমেন্টের সম্মুখ ভাগে সঞ্চয়জাত যে সমভূমি গঠিত হয় তাকে বাজাদা বা বাহাদা বলে।
গঠন উচ্চভূমির সম্মুখভাগের পশ্চাৎ অপসারণের ফলে উচ্চভূমির সম্মুখভাগ সমান্তরালভাবে কর্তিত হয়ে পেডিমেন্ট সৃষ্টি হয়। মরু অঞ্চলে পেডিমেন্টের সম্মুখভাগের অবনমিত অংশে জলধারা-বাহিত বিভিন্ন আকৃতির শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি, পলি ও কাদা প্রভৃতি সঞ্জিত হয়ে বাজাদা সৃষ্টি হয়।
ভূমির প্রকৃতি পেডিমেন্টগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রস্তরখণ্ড, বালি ও পলি দ্বারা আবৃত থাকতে পারে, আবার উন্মুক্ত ও থাকতে পারে। পেডিমেন্টগুলি মৃদু ঢালে বিস্তৃত। ভূমিভাগ অবতল প্রকৃতির। বাজাদা সঞ্চয়জাত সমভূমি। এই অংশে ভূমির ঢাল এত কম যে একে সমভূমি বলে মনে হয়। ভূমির ঢাল সামান্য উত্তল প্রকৃতির।
প্রক্রিয়াসমূহ আবহবিকার, পুঞ্জিত স্খলন, জলধারা ও বায়ুপ্রবাহ – এগুলির যৌথ কার্যের ফলে পেডিমেন্ট সৃষ্টি হয়। মূলত জলধারার কার্যের ফলে পেডিমেন্টের সম্মুখে শিলাখণ্ড, কাঁকর, বালি ও পলি সঞ্চিত হয়ে বাজাদার সৃষ্টি হয়।

সমপ্রায়ভূমি ও পাদ সমভূমির মধ্যে পার্থক্য

পার্থক্যের বিষয় সমপ্রায়ভূমি (পেনিপ্লেন) পাদ সমভূমি (পেডিপ্লেন)
নামকরণ Pene একটি ল্যাটিন শব্দ, এর অর্থ প্রায় এবং Plain শব্দের অর্থ সমভূমি অর্থাৎ প্রায় সমভূমি বা সমপ্রায় সমভূমি। জার্মান শব্দ পেডির অর্থ পাদদেশ এবং প্লেন শব্দের অর্থ সমভূমি। অতএব পেডিপ্লেন শব্দের অর্থ হল পাদদেশের সমভূমি।
সংজ্ঞা স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য পর্যায়ে নদীর কার্যের ফলে যে বৈচিত্র্যহীন সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে পেনিপ্লেন বলে। মরু অঞ্চলে উচ্চভূমির সম্মুখভাগে আবহবিকার, জলধারা ও বায়ুর মিলিত কার্যের ফলে শিলাখণ্ড সঞ্জিত হয়ে যে বিস্তীর্ণ সমভূমি সৃষ্টি হয়, তাকে পেডিপ্লেন বলে।
জলবায়ুর প্রভাব আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে পেনিপ্লেন সৃষ্টি হয়। শুষ্ক মরু বা মরুপ্রায় জলবায়ুতে পেডিপ্লেন সৃষ্টি হয়।
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া পেনিপ্লেন সৃষ্টিতে আবহবিকার ও পুঞ্জিত স্খলন অংশগ্রহণ করলেও নদীর কাজই প্রাধান্য বিস্তার করে। আবহবিকার, পুঞ্জিত স্খলন, জলধারা ও বায়ুপ্রবাহ একযোগে পেডিপ্লেন সৃষ্টিতে সমান গুরুত্ব পালন করে।
গঠন প্রকৃতি পেনিপ্লেন মৃদু উত্তাল প্রকৃতির। পেডিপ্লেন কিছুটা অবতল প্রকৃতির।
অন্তিম পর্যায়ে সৃষ্ট ভূমিরূপ প্রায় বৈচিত্র্যহীন সমপ্রায় সমভূমি সৃষ্টি হয়। ক্ষয় প্রতিরোধী শিলায় গঠিত অনুচ্চ টিলাগুলিকে মোনানক বলে ৷ মোনাডনকই সমপ্রায় ভূমির মাঝে কিছুটা বৈচিত্র্য আনে। মরু অঞ্চলে ক্ষয়ের শেষ পর্যায়ে অসংখ্য পলল ব্যজনী সংযুক্ত হয়ে বিস্তীর্ণ পেডিপ্লেন গঠন করে। এরই মাঝে ক্ষয় প্রতিরোধী জলবিভাজিকার শেষ চিহ্ন হিসেবে ইনসেলবার্জ অবস্থান করে।


স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের ব্যাঘাত (Interruption of Fluvial Cycle)

ভূমিকা (Introduction)

স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের ধারণা অনুযায়ী ভূমিভাগ পর্যায়ক্রমে যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্যের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে সমপ্রায় ভূমিতে (Peneplain) পরিণত হলে ক্ষয়চক্রটি সম্পূর্ণ হয়। কিন্তু ক্ষয়চক্র চলাকালীন সমুদ্র পৃষ্ঠের উত্থান ঘটলে ক্ষয়চক্র সম্পূর্ণ হওয়ার সময় এগিয়ে আসে, অর্থাৎ এটি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সম্পন্ন হয়ে যায়। অন্যদিকে, সমুদ্রপৃষ্ঠের অবনমন ঘটলে কিংবা অন্য কোনো কারণে নদীর ক্ষয় করার ক্ষমতা বেড়ে গেলে ক্ষয়চক্র সম্পূর্ণ হতে পারে না। এভাবে তখন স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র বাধা প্রাপ্ত হয়। একে ক্ষয়চক্রের ব্যাঘাত বা বিঘ্ন (Interruption of Fluvial Cycle) বলে।

ক্ষয়চক্রের বিঘ্ন সাধারণত সমুদ্র পৃষ্ঠের আপেক্ষিক উত্থান বা পতনের সঙ্গে যুক্ত। সমুদ্রপৃষ্ঠের আপেক্ষিক উত্থান ঘটলে তাকে ক্ষয়ের শেষ সীমার ধনাত্মক পরিবর্তন (Positive Change of Base Level of Erosion) বলে। সমুদ্র পৃষ্ঠের এরূপ পরিবর্তনে ক্ষয়চক্র এগিয়ে আসে। অর্থাৎ, নির্ধারিত সময়ের আগেই ক্ষয়চক্রের পরিসমাপ্তি ঘটে। সমুদ্রপৃষ্ঠের পতন ঘটলে তাকে ক্ষয়ের শেষ সীমার ঋণাত্মক পরিবর্তন (Negative Change of Base level of Erosion) বলে। এর ফলে ক্ষয়চক্র নতুন করে শুরু হয়। ক্ষয়চক্র পুনরায় শুরু হওয়ায় এর পরিসমাপ্তি ঘটতে দীর্ঘ সময় লাগে।


ভূমিরূপের পুনজৌবন (Rejuvenation of Landiom)


সংজ্ঞা - সমুদ্রপৃষ্ঠের পতন হলে অথবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক কারণে নদীর ক্ষ্যা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে, নদী তখন ওই পুরোনো ভূ - ভাগকে নতুন উদ্যমে নীচের দিকে ক্ষয় করতে শুরু করে। এভাবে পর্যায়িত বা সমপ্রায় ভূমিরূপের উপর যৌবনোচিত ভূমিরূপ অধ্যারোপিত (Superimposed) হয়। একে ভূমিরূপের পুনর্যৌবন লাভ বলে।

পুনর্যৌবন লাভের উপায়: ভূমিরূপের পুনর্যৌধন লাভ সাধারণত তিন ভাবে ঘটে থাকে। যথা-

(1) গতিমা পুনর্যৌবন লাভ (Dynamic Rejuvenation): মহিভাবক আলোড়নে ভূমিভাগের আপেক্ষিক উচ্চতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি সংলগ্ন অঞ্চলে গিরিজনি আলোড়নেও উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। ভূমিভাগের এভাবে উচ্চতা বৃদ্ধি ঘটলে নদীগঠিত পথের ঢাল বেড়ে যায়। এর ফলস্বরূপ, নদীর গতিবেগের সঙ্গে তার জলপ্রবাহের পরিমাণও বহুগুণে বেড়ে যায় এবং নিম্নক্ষয় করতে সমর্থ হয়। এভাবে পুনরুদ্ধিত ভূমিভাগ পুনর্যৌবন লাভ করে। একে গতিময় পুনর্যৌবন লাভ বলে। ভূমিভাগ সমুদ্রের দিকে হেলে উত্থিত হলে ওই অভিমুখে সমগ্র গতিপথ বরাবর সঙ্গে সঙ্গে উপত্যকার গভীরীকরণ শুরু হয়। তবে ভূমিভাগ যেদিকে হেলে থাকে তার আড়াআড়িভাবে নদী প্রবাহিত হলে, ভূমির উত্থানের প্রভাব সে সময়ে লক্ষ করা যায় না। কারণ, ঢালের আড়াআড়ি অবস্থায় নদীর নিম্নক্ষয় খুব ধীরে ঘটে। 

(2) ইউস্ট্যাটিক পুনর্যৌবন লাভ (Eustatic Rejuvenation): পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠ অবনমিত হলে ইউস্ট্যাটিক পুনর্যৌবন লাভ ঘটে। এটি দুটি কারণে ঘটে থাকে –

(ক) ভূ-আলোড়নের ফলে সমুদ্রবন্ধ (Ocean floor) বিস্তৃত হলে অথবা বসে গেলে সমুদ্রের জল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও জলতল নীচে নেমে যায়। তখন ভূমির স্থানীয় উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। ফলে, নদীর নিম্নক্ষ্যা করার ক্ষমতাও বেড়ে যায় এবং ভূমিভাগ পুনর্যৌবন লাভ করে। একে ভূমিপর্যয়-জনিত পুনর্যৌবন লাভ বলে।

(খ) হিমযুগে সমুদ্রের জল বাষ্পীভূত হয়ে তুষাররূপে উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে সঞ্চিত হতে থাকলে সমুদ্রের জল কমতে থাকে। অন্যদিকে যে পরিমাণ জল নদী মাধ্যমে সমুদ্রে ফিরে আসে, তা বাষ্পীভবনের মাত্রা অপেক্ষা অনেক কম হয়। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের পতন ঘটে এবং ভূমিভাগের পুনর্যৌবন লাভ ঘটে। একে হৈমিক - ইউস্ট্যাটিক পুনর্যৌবন লাভ (Glacio- Eustatic Rejuvenation) বলে।

(3) স্থিতিশীল পুনর্যৌবন লাভ (Static Rejuvenation) : ভূমির উত্থান ও সমুদ্রপৃষ্ঠের অবনমন ছাড়াই অন্য কোনোভাবে নদীর নিম্ন বৃদ্ধি পেলে, ভূভাগ যৌৱন অবস্থা লাভ করে। একে স্থিতিশীল পুনর্যৌবন লাভ বলে। প্রধানত তিনটি কারণে এটি ঘটে থাকে। যথা-


1. নদীর বোঝা হ্রাস ঘটলে

2. নদীগ্রাস ঘটলে

3. জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটলে


1. নদীর বোঝা হ্রাস- নদীর বোঝা কমে গেলে এর পুরো গতিশক্তি নিম্নক্ষয়ে কাজ করে। ফলে, ভূমিভাগে পুনরায় যৌবনের চিহ্ন ফুটে ওঠে।

2. নদীগ্রাস- মস্তক ক্ষয়ের ফলে কোনো শক্তিশালী নদী অন্য নদীকে গ্রাস করলে ওই অধিগৃহীত নদীর জল শক্তিশালী নদীতে পড়ে। ফলে, নদীর জলপ্রবাহের মাত্রা বেড়ে যায়। তখন নদী আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে নিম্নক্ষর করতে শুরু করলে ভূমিভাগ পুনরায় যৌবন অবস্থা লাভ করে।

3. জলবায়ুর পরিবর্তন - কোনো নদী অববাহিকায় জলবায়ুর পরিবর্তনের (যেমন: মরু জলবায়ু থেকে আর্দ্র জলবায়ুতে পরিবর্তন) কারণে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে নদীর জলপ্রবাহের মাত্রাও বেড়ে যায়। নদী তখন নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে ভূমিভাগকে যৌবনে উন্নীত করে।


পুনর্যৌবন লাভের ফলে গঠিত ভূমিরূপ বা এর ফলাফল (Resultant landforms of rejuvenation or its offect)


(1) উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা (Valley in valley) : ভূমিরূপের পুনর্যৌবন লাভের ফলে নদীর ঊর্ধ্ব ও নিম্নপ্রবাহের মধ্যে ভূ-প্রকৃতিগত অসংগতি (Topographic unconformity) লক্ষ করা যায়। সাধারণত নদী অববাহিকার ঊর্ধ্বাংশে ভূমিরূপ পরিণত বা বার্ধক্য অবস্থায় থাকে। অন্যদিকে নিম্নপ্রবাহে নদী পুরোনো উপত্যকাকে গভীরীকরণের মাধ্যমে সংকীর্ণ V আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি করে।

উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা

ঊর্ধ্বাংশে পুরোনো প্রশস্ত উপত্যকার ঢাল মৃদু থাকে ও নিম্নাংশে নবীন উপত্যকার ঢাল খাড়া হয়। এভাবে এই দুই উপত্যকার সংযোগস্থলে চালের বিচ্যুতি (Break of slope) জনিত একটি স্বল্পভূমি (Shoulder land) গড়ে ওঠে। নিম্ন উপজকার আড়াঝাড়ি প্রথচ্ছেদ নিলে দেখা যায় যে, পুরাতন উপত্যকার মধ্যে নতুন উপত্যকা অবস্থান করছে। এরুপ উপত্যকাকে উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা বা দ্বি - চক্ৰ উপত্যকা (Two-cyclic valley) বলে।

(2) নিক বিন্দু (Knick Point) : পুনর্যৌবন লাভের কারণে নদীর দৈর্ঘ্য বরাবর একটি বিন্দুতে ঊর্ধ্ব উপত্যকার পুরোনো মৃদু ঢালের সঙ্গে নিম্ন উপত্যকার নতুন খাড়া ঢালের সংযোগ ঘটে। একে নিক বিন্দু বলে। নিক বিন্দুতে সাধারণত জলপ্রপাত গঠিত হয়। এই বিন্দুতে নদীর মস্তকমুখী ক্ষয় দ্রুত হতে থাকে [ চিত্রে (ক) ] এবং নবগঠিত ক্ষয়ের শেষসীমা অনুযায়ী নদী তার ঢালকে মসৃণ করার জন্য মোহনা থেকে পিছনের দিকে ক্ষয় করতে শুরু করে। এভাবে মন্ত্রমুখী ক্ষয়ের ফলে নিক পয়েন্টও পিছু হঠতে থাকে এবং এক সময় এটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় [ চিত্রে (খ) ]।

নিক বিন্দু

(3) নদীমঞ্চ (River Terrace) : নদীর দু-পাশে অনেক সময় এক বা একাধিক ধাপ বা মঞ্চ দেখা যায়। পুনর্যৌবন প্রাপ্তির ফলে নদী নীচে উন্নভাবে কেটে বসে যাওয়ার জন্য পূর্বেকার নদী উপত্যকার পরিত্যক্ত প্লাবন সমভূমি নদীর দু-পাশে কিছুটা ওপরে মরে আকারে অবস্থান করে। একে নদীম বলে। যদি নদীমকে যথেষ্ট পলল থাকে, তাহলে তাকে পলল নদীমণ্য বলে।

নদীমঞ্চ

অল্প পলল যুক্ত বা পলল-শূন্য নদীমাকে প্রস্তরশয্যা নদীম) (Bed rock terraces) বলে পুনর্যৌবন লাভের ফলে গঠিত নদীমণের বৈশিষ্ট্য হল উপত্যকার উভয়পার্শ্বে মঞ্চগুলি সমান উচ্চতায় জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে। তাই, এদের যুগল নদী (Paired Terraces) বলে এছাড়া অসমান উচ্চতায় যেসব নদীমও গড়ে ওঠে, তাদের অযুগল নদীম বলে।)


4. খোদিত নদীবাঁক (Incised Meander) : পরিণত এবং বার্ধক্য অবস্থায় নদী সাধারণত বড়ো বড়ো বাঁক নিয়ে প্রবাহিত হয়। পুনর্যৌবন প্রাপ্তি ঘটলে নদীবীকের মধ্যে নদী উল্লম্বভাবে কেটে (Vertical cutting) যেমন বসে যায়, তেমনি পার্শ্বক্ষয় (Lateral erosion) করে সরতে থাকে। একে কর্তিত বা খোদিত নদীবাক বলে। কর্তিত নদীরীক দু-প্রকারের হয়,

যেমন-

(ক) নিম্নক্ষয় প্রবল থাকলে নদী সরাসরি বাঁকের মধ্যে কেটে বসে যায় ও দু-পাশে সমান খাড়া প্রাচীর দ্বারা আবদ্ধ থাকে এদের সমখাড়া পরিখাবেষ্টিত (Entrenched or Intrenched) নদীরীক বলে।

(খ) কোনো কোনো ক্ষেত্রে নদীর নিম্নক্ষয় অপেক্ষা পার্শ্বক্ষয় বেশি হলে নদী একপাশে সরতে থাকে এবং সেক্ষেত্রে নদীবাঁকের উভয় পার্শ্বের ভূমির ঢাল একই প্রকার থাকে না, একপাশ বেশি খাড়া ও অন্যপাশ অপেক্ষাকৃত মৃদু ঢালযুক্ত হয়। একে অসমখাড়া পরিখাবেষ্টিত (Ingrown) নদী বাঁক বলে।

(5) উত্থিত সমুদ্র সৈকত ও সমুদ্রণ) (Raised Beaches and Marine Terraces) : যদি সমূদ্র বহুদিন ধরে উপকূলভাগে ক্ষয়কার্য করে, তবে ওই অঞ্চলে সাধারণত অবক্ষেপযুক্ত অথবা অবক্ষেপহীন সৈকতের সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় উপকূলভাগ উত্থিত হলে কিংবা সমুদ্রতলের পতন হলে পূর্বেকার সৈকত বর্তমান সমুদ্রতলের ঊর্ধ্বে মঞ্চ বা বেঙের আকারে দাঁড়িয়ে থাকে।

খোদিত নদীবাঁক

এই মঞ্চের উচ্চতা 50 মিটারের কম হলে তাকে উত্থিত সমুদ্রসৈকত (Raised beaches) ও 50 মিটারের বেশি হলে তাতে সমুদ্রন (Marine terrace) বলে। গ্রেট ব্রিটেনের দক্ষিণ ও পশ্চিম উপকূলে উত্থিত সমুদ্রসৈকত গড়ে উঠেছে।


ক্ষয়চক্র MCQ প্রশ্ন উত্তর


1. ডেভিস তাঁর স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের প্রস্তাব করেন-

(a) 1980 সালে

(b) 1899 সালে

(c) 1910 সালে

(d) 1950 সালে


2. ডেভিস তাঁর ক্ষয়চক্র মতবাদের প্রত্যকটি পর্বকে কয়টি উপপর্বে ভাগ করেছেন?

(a) দুটি

(b) তিনটি

(c) পাঁচটি

(d) চারটি


3. নদীর পর্যায়িত ঢাল কোন্ অবস্থায় দেখা যায়?

(a) যৌবন

(b) বার্ধক্য

(c) পরিণত

(d) বার্ধক্য ও পরিণত


4. ভৃগুতটের পশ্চাদপসরণ ধারণাটি কে দিয়েছেন?

(a) ডেভিস

(b) পেঙ্ক

(c) ক্রিকমে

(d) এল.সি.কিং


5. কোনো অঞ্চলের ভূমিরূপ বা ভূচিত্র হলো গঠন, প্রক্রিয়া এবং পর্যায়ের ফলশ্রুতি, এই ধারণাটি দেন -

(a) হ্যাক

(b) ডেভিস

(c) ক্রিকমে

(d) এল.সি.কিং


6. অসম বিন্যাস তত্ত্ব মতবাদটি প্রবর্তন করেন-

(a) হ্যাক

(b) ডেভিস

(c) ক্রিকমে

(d) এল.সি.কিং


7. নদী ক্ষয়চক্রের শেষ অবস্থায় গঠিত ভূমিরূপকে প্যানপ্লেন নামে অভিহিত করেন কে?

(a) থাক

(b) ডেভিস

(c) ক্লিকমে

(d) এল.সি.কিং


8. শুষ্ক ক্ষয়চক্রের অন্তিম পর্যায়ে সৃষ্ট ভূমিরূপকে প্যানফ্যান নামে কোন্ বিজ্ঞানী অভিহিত করেন?

(a) ডেভিস

(b) এল.সি.কিং

(c) ক্লিকমে

(d) লসন


9. ক্লিকমের মতে প্লাবনভূমির উপর পাশাপাশি অবস্থিত নদীগুলির পার্শ্বক্ষয়ের ফলে কোন ভূমিরূপ গঠিত হয়?

(a) পেডিপ্লেন

(b) পেনিপ্লেন

(c) প্যানপ্লেন

(d) প্যানফ্যান


10. গতিশীল ভারসাম্য মতবাদের জনক হলেন

(a) চার্লস ডারউইন

(b) ডব্লু.এম. ডেভিস

(c) জে.টি. হ্যাক

(d) এল.সি.কিং


11. পর্বতের দুদিকে পেডিমেন্ট যে স্থান বরাবর পরস্পর মিলিত হয়, সেই স্থানকে কী বলে ?

(a) পেডিমেন্ট ঢাল

(d) বাজাদা

(c) পেডিমেন্ট

(d) ইনসেলবার্জ


12. মোনাডনক গঠিত হয় –

(a) আর্দ্র অঞ্চলে

(b) শুষ্ক মরু অঞ্চলে

(c) উপকূলীয় অঞ্চলে

(d) পার্বত্য এলাকায়


13. সচরাচর মরু অঞ্চলে ক্ষয়চক্রের শেষ সীমা হিসাবে ধরা হয়-

(a) সমুদ্রপৃষ্টকে

(b) ভূপৃষ্টের উপরিভাগকে

(c) ভৌমজলের উপরিতলকে

(d) উপকূলকে


14. ক্ষয় চক্রের মতবাদটির প্রবর্তক কে?

(a) কিং

(b) পেঙ্ক

(c) ডেভিস

(d) ওয়েগনার


15. ডেভিসের তত্ত্বে কোন্ ক্ষয়চক্রকে স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র বলা হয়?

(a) মরুর

(b) জলাভূমির

(c) বায়ুর

(d) নদীর


16. স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের শেষ সীমা হল -

(a) ভৌমজলপৃষ্ট

(b) সমুদ্রপৃষ্ট

(c) ভূপৃষ্ট

(d) পার্বত্য পাদদেশ


17. ক্ষয়চক্রের কোন্ অবস্থায় নিম্নক্ষয় সবচেয়ে বেশি হয়?

(a) যৌবন

(b) পরিণত

(c) বার্ধক্য

(d) যৌবন ও পরিণত


18. মোনানক দেখা যায়-

(a) পার্বত্য অঞ্চলে

(b) সমপ্রায় ভূমিতে

(c) মরু অঞ্চলে

(d) মালভূমি অঞ্চলে


19. মরু অঞ্চলের ছোটো ছোটো লবণাক্ত হ্রদকে বলে -

(a) প্লায়া

(b) ইনসেলবার্জ

(c) লেগুন

(d) এসকার


20. সমপ্রায় ভূমিতে ক্ষয়কার্য প্রতিরোধ করে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়গুলিকে বলে -

(a) ইনসেলবার্জ

(b) পেডিমেন্ট

(c) মোনাডনক

(d) মরুর


21. ভূগুতটের সমান্তরাল পশ্চাদপসারণ সাধারণত কোন ক্ষয়চক্রে ঘটে থাকে?

(a) মরুর

(b) জলাভূমির

(c) বায়ুর

(d) নদীর


22. মরু ক্ষয়চক্রের ফলে গঠিত অনুচ্চ টিলাকে বলে -

(a) ইনসেলবার্জ

(b) পেডিমেন্ট

(c) মোনাক

(d) প্লায়া


23. 'বিবর্তনবাদ তত্ত্ব' কে প্রতিষ্ঠা করেন?

(a) ডারউইন

(b) এল.সি.কিং

(c) ডেভিস

(d) জি.টি. হ্যাক


24. নদীবক্ষে উৎপন্ন যে বালুচরের ওপর দিয়ে জল প্রবাহিত হয় তাকে কী বলে?

(a) নদীখাত

(b) শোল/মগ্নচড়া

(c) মরুদ্যান

(d) প্লাবনভূমি


25. ডেভিস কত সালে 'শুষ্কতার ক্ষয়চক্র' সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন?

(a) 1909

(b) 1899

(c) 1805

(d) 1905


26. শুষ্কতার ক্ষয়চক্র কীসের দ্বারা সম্পন্ন হয় ?

(a) বায়ু

(b) নদী

(c) হিমবাহ

(d) সমুদ্রতরঙ্গ


27. 'পেডিপ্লেন গঠন তত্ত্ব' কে প্রবর্তন করেন?

(a) গিলবার্ট

(b) এল. সি. কিং

(c) ডেভিস

(d) জি. টি. হ্যাক


28. প্রত্যেক ভূমিরূপের একটি নির্দিষ্ট জীবন ইতিহাস আছে - একথা কে বলেছেন ?

(a) ডেভিস

(b) পেঙ্ক

(c) ক্লিকমে

(d) হ্যাক


29. 'ডেভিসের ক্ষয়চক্রের শর্তাবলীতে ভূমির প্ররম্ভিক ঢাল হল-

(a) স্থলভাগমুখী

(b) নদীসঙ্গমমুখী

(c) সমুদ্রমুখী

(d) নিম্নমুখী



30. ‘যৌবন অবস্থা নদীর নিম্নক্ষয় ভূমির যে উচ্চতা বাড়ায়

(a) মোট উচ্চতা

(b) চরম উচ্চতা

(c) আপেক্ষিক উচ্চতা

(d) জ্ঞাত উচ্চতা 


31. পুনযৌবন লাভের ফলে নদীর প্রবাহপথে ঢালের বিচ্যুতি দেখা যায় -

(a) নিক বিন্দুতে

(b) সঙ্গমস্থলে

(c) মোহনায়

(d) পর্বতশীর্ষে

Tags

Post a Comment

1 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area