Ads Area


আকবরের রাজপুত নীতি ও তার ফলাফল - Akbar Rajput Policy And Its Results PDF

আকবরের রাজপুত নীতি ও তার ফলাফল - Akbar Rajput Policy And Its Results PDF


আকবরের রাজপুত নীতি ও তার ফলাফল - Akbar Rajput Policy And Its Results PDF


আকবরের রাজপুত- নীতি ও তার ফলাফল আলোচনা করো? (Analyse the Rajput Policy of Akbar and discuss is result.)


উত্তর- সম্রাট আকবরের গভীর দূরদৃষ্টি ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতার বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর রাজপুত- নীতির মধ্যে। স্মিথ প্রমুখ কোনো কোনো ঐতিহাসিক আকবরের রাজপুত-নীতিকে কেবলমাত্র ‘প্রয়োজন ভিত্তিক’ (utilitarian) কারণে উদ্ভূত বলে ব্যাখ্যা করলেও, তা সঠিক নয়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিচার করলে দেখা যায়, রাজপুত-নীতি অনুসরণের পেছনে আকবরের একাধিক উদ্দেশ্য ছিল। একাধিক কারণ তাঁকে এই ধরনের নীতি অনুসরণে উদ্যোগী করেছিল।


(1) চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতাব্দীর হিন্দু নবজাগরণের ফলে রাজপুতজাতি ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়েছিল। প্রবল ক্ষমতাশালী দিল্লির সুলতানি শাসনেও রাজপুতদের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ ছিল। ‘খানুয়ার যুদ্ধে’ বিধ্বস্ত হলেও গভীর জাতীয়তাবোধ ও আত্মত্যাগের প্রেরণা এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির ফলে রাজপুতজাতি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিল।

পার্সিভ্যাল স্পিয়ারে মতে, ব্রাহ্মণরা যদি হিন্দুধর্মের মানসিক শক্তি হয়, তবে ক্ষত্রিয় রাজপুতজাতি ছিল হিন্দুদের দৈহিক শক্তি। তাই ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে রাজপুতজাতির একটি বিশিষ্ট স্থান ছিল। বিচক্ষণ আকবর তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, যা তাঁর পূর্বসূরিরা বুঝতে পারেননি।

আরও পড়ুন- আকবরের শাসনকালে মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির বিবরণ দাও

(2) আকবর উপলব্ধি করেছিলেন যে, কেবল বহিরাগত মুসলমানদের উপর নির্ভর করে ভারতে সর্বজনগ্রাহ্য একটি শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। এদেশীয় রাজনৈতিক জাতি বা বংশগুলিকে প্রশাসনের সাথে যুক্ত করার প্রয়োজনবোধ থেকে তিনি রাজপুত জাতির প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি নেন।

(3) মুঘল অভিজাতবর্গ এবং আত্মীয়স্বজনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং ঈর্ষা আকবরকে বিব্রত করেছিল। মির্জা মহম্মদ হাকিমের বিদ্রোহ, ধাত্রীমাতা মহাম অনাযা ও তাঁর পুত্র আদম খাঁ'র ষড়যন্ত্র, মন্ত্রী শাহ মনসুরের বিদ্রোহ ইত্যাদি ঘটনা থেকে আকবর উপলব্ধি করেন যে, মুসলমান কর্মচারীর পাশাপাশি ভারতীয় অমুসলমান কর্মচারীর সমন্বয় করলে প্রশাসনে ভারসাম্য আনা সম্ভব হবে।

(4) দিল্লি-সুলতানির পতনের জন্য আফগানজাতি মুঘলদের উপর ক্ষুব্ধ ছিল। ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের আশায় ভারতে আফগান সর্দাররা ঐক্যবদ্ধ হতে চেষ্টা চালাছিলেন। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় আফগান শাসকদের অবস্থান ও ক্ষমতাবৃদ্ধি মুঘল সাম্রাজ্যের অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক ছিল।


আরও পড়ুন- আকবরের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা সংক্ষেপে বর্ণনা করাে


তাই আকবর ভারতীয় যোদ্ধৃজাতি রাজপুতদের মিত্রে পরিণত করে মুঘলের হাত শক্ত করতে চাইছিলেন।

(5) রাজপুত জাতির শৌর্য-বীর্য, আত্মত্যাগের প্রেরণা, বিশ্বস্ততা, সাহস ইত্যাদি আকবরকে মুগ্ধ করে। আকবর যথার্থই উপলব্ধি করেন যে, রাজপুতদের সাথে মিত্রতা স্থাপিত হলে তাঁর হাত শক্ত হবে।

(6) বাস্তব প্রয়োজনের সাথে সাথে আকবরের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তাঁর রাজপুত নীতি রূপায়ণে সাহায্য করেছিল। আকবর হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য ও সমন্বয় দ্বারা সমৃদ্ধ ভারত গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। 

তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের অন্যতম রাজতান্ত্রিক গোষ্ঠী রাজপুতদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রয়াসী হন।


বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন-

রাজপুতদের সাথে মৈত্রীবন্ধন সুদৃঢ় করতে আকবর কয়েকটি নতুন ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। শক্তিপ্রয়োগের পরিবর্তে আত্মীয়তার বন্ধনে তিনি রাজপুতদের আবদ্ধ করেন। তিনি স্বয়ং অম্বরের রানা বিহারীমলের কন্যা মানবাঈকে বিবাহ করেন। পরে তিনি বিকানির ও জয়পুরের রাজকন্যাদ্বয়ের পাণিগ্রহণ করেন। যোধপুরের রানা উদয় সিংহের কন্যা যোধাবাঈ -এর সাথে আকবর তাঁর পুত্র জাহাঙ্গীরের বিবাহ দেন। ড. বেণীপ্রসাদের মতে, “এই বিবাহ- সম্পর্ক ভারতীয় রাজনীতিতে এক নবযুগের সূচনা করেছিল।” তাঁর ভাষায়: “It symbolised the dawn of a new era in Indian Politics. 


রাজনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান-

বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের পাশাপাশি আকবর রাজপুতদের রাজনৈতিক স্বীকৃতি দেন। বিশিষ্ট রাজপুত ভগবানদাস, টোডরমল, মানসিংহ প্রমুখকে উচ্চরাজপদে নিয়োগ করে সম্মানিত করেন। আকবরের উদারতা সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়কে স্পর্শ করে। তাঁর উদারনীতির ফলে মুঘল সাম্রাজ্য যেমন উপকৃত হয়, তেমনি রাজপুতদের সামাজিক ও রাজনৈতিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পায়।


যুদ্ধনীতি-

সকল রাজপুত রাজার ক্ষেত্রেই যে আকবর বিনা যুদ্ধে সফলকাম হয়েছিলেন তা নয়। এ বিষয়ে মেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের অধিকারী। মেবারের রানা উদয় সিংহ এবং রানা প্রতাপ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আকবরের বিরোধিতা চালিয়ে যান। মেবার দখলের জন্য আকবর যুদ্ধ করেছেন ঠিকই, কিন্তু কখনোই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মানসিকতা নিয়ে রাজপুতদের শাস্তি দেননি।


ফলাফল-

রাজপুতদের প্রতি আকবর যে বন্ধুত্বের নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তার ফলে রাজপুত ও মুঘল- উভয়েরই মঙ্গল হয়েছিল। যোদ্ধা- রাজপুতদের সহায়তায় মুঘল সেনাবাহিনী শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। রাজপুত- মৈত্রীর ফলে একদিকে যেমন সাম্রাজ্যের সংহতি সাধিত হয়েছিল, তেমনি অন্যদিকে তা সাম্রাজ্য-বিস্তৃতির সহায়ক হয়েছিল। রাজপুতানায় মুঘল-আধিপত্যই পরোক্ষে গুজরাটে মুঘল-বিস্তৃতির সহায়ক হয়েছিল।

যার ফলে মুঘল-ভারতের অর্থনীতি সুদৃঢ় হয়েছিল। রাজপুতদের ক্ষেত্রেও এই মৈত্রীবন্ধন সহায়ক হয়েছিল। এর ফলে বহু রাজপুত নিজ প্রতিভা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও প্রশাসনিক পদ লাভ করেছিলেন।

আরও পড়ুন- আকবর ও মুঘল সাম্রাজ্যের সংহতিকরণ

রাজপুতানায় রাজপুতদের শাসন বহাল থাকা সম্ভব হয়েছিল। মুঘল সাম্রাজ্যবাদের লেলিহান আগুনে পুড়ে ছাই হওয়ার পরিবর্তে, রাজপুতগণ স্বমর্যাদায় মুঘল-ভারতীয় রাজনীতিতে বিশিষ্ট ভূমিকা পালনে সক্ষম হয়েছিল।


🔘 Join Our Telegram Chanel - Click Here 🔘


আকবরের রাজপুত- নীতি ও তার ফলাফল আলোচনা করো? PDF ডাউনলোড



Click Here To Download PDF

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area