Ads Area


মনোবিজ্ঞান কাকে বলে || মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো || মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলি কী কী

মনোবিজ্ঞান কাকে বলে || মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো || মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলি কী কী- সুপ্রিয় বিদ‍্যার্থীরা আজকে তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম মনোবিজ্ঞান কাকে বলে, পদ্ধতি ও বিভিন্ন শাখা। আজকের এই টপিকটি থেকে মনোবিজ্ঞান কাকে বলে || মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো || মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলি কী কী গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হল।


মনোবিজ্ঞান কাকে বলে || মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো || মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলি কী কী

মনোবিজ্ঞান কাকে বলে? মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো। মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলি কী কী?


বর্তমানে মনোবিজ্ঞান অন্যান্য বিষয়ের মতো সুসংবদ্ধ বিষয় হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মনোবিজ্ঞানের অর্থ ও ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে কতগুলি স্তরের মধ্যে দিয়ে। মনোবিজ্ঞানের ইংরাজি প্রতিশব্দ হল Psychology। গ্রিক ভাষায় Psyche কথার অর্থ soul বা আত্মা এবং Logos কথার অর্থ Science বা বিজ্ঞান। Psychology কথাটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল আত্মার বিজ্ঞান বা Science of soul কিন্তু আত্মা সব সময় নিরীক্ষণের বাইরে, তাকে নিয়ে কোনো পরীক্ষানিরীক্ষা চলে না। সুতরাং এই সংজ্ঞাটি গ্রহণযোগ্য নয়।


পরবর্তীকালে মনোবিদ Hoffding বলেন, 'Psychology is the science of mind' অর্থাৎ মনের বিজ্ঞান। মনস্তত্ত্বের কাজ হল মনের বিভিন্ন ক্রিয়ার অনুশীলন করা, কিন্তু আত্মার মতোই মনেরও কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। সুতরাং এমন জিনিস বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হতে পারে না। অতএব এই সংজ্ঞাটি সর্বজনগ্রাহ্য হল না।


কোনো কোনো মনোবিজ্ঞানী মনের পরিবর্তে চেতনা বা 'consciousness' কথাটি ব্যবহার করেন। Angell সাইকোলজির সংজ্ঞা দিলেন, Psychology is the science of consciousness অর্থাৎ চেতনার অনুশীলনকারী বিজ্ঞান। কিন্তু এই সংজ্ঞাটিও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হল না। বিজ্ঞান হবে বস্তুধর্মী জ্ঞান এবং নৈর্ব্যক্তিক। কিন্তু আত্মা ও মনের মতো চেতনার অনুশীলন করে আমরা তাকে সম্পূর্ণভাবে জানতে পারি না।


আচরণবাদী J. B. Watson সাইকোলজির এক নতুন সংজ্ঞা দিলেন - Psychology is the science of human behaviour', মনোবিদ্যা হল মানুষের আচরণ অনুশীলন করার বিজ্ঞান। Mc Dougall বললেন, 'Psychology is the positive science of the behaviour of living beings' অর্থাৎ মনোবিদ্যা হল প্রাণীর আচরণ অনুশীলনকারী


বিজ্ঞান। আচরণ বলতে তিনি উদ্দেশ্যমূলক কাজকে বুঝিয়েছেন। আচরণবাদীদের মতে, মানুষের সব আচরণই দেহের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ক্রিয়াকলাপ অনুশীলন করে জানা যায়, মন বা চেতনার অস্তিত্ব স্বীকারের কোনো প্রয়োজন হয় না। সুতরাং ধীরে ধীরে Psychology-র সংজ্ঞা ও ধারণা পরিবর্তিত হয়ে গেল। Wood Worth-এর ভাষায় 'First Psychology lost its soul, then it lost its mind, then it lost consciousness, it still has behaviour, of a kind', মনস্তত্ত্ব বিজ্ঞান প্রথমে ছিল দর্শনশাস্ত্রের অন্তর্গত। আত্মচেতনা ও মন হারিয়ে এটি বর্তমানে হল আচরণের বিজ্ঞান।


এইসব সংজ্ঞাগুলিকে একত্রিত করে মনোবিজ্ঞানের যে সাধারণ সংজ্ঞা পাওয়া যায় সেটি হল– মনোবিজ্ঞান জীবের আচরণ সম্বন্ধীয় বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান যা জীবের আচরণের ভিত্তিতে মানসিক প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ, শ্রেণিবিভাগ, গতিপ্রকৃতি, নিয়ম, কারণ ও পরিমাণ নির্ণয় ব্যাখ্যা করে এবং মানসিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন দেহগত প্রক্রিয়াগুলিকে ব্যাখ্যা করে।


মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতি:


বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হল সত্যকে আবিষ্কার করা। বিভিন্ন মানসিক অবস্থা ও বিভিন্ন আচরণকে পর্যবেক্ষণ করে তাদের সম্পর্কে সাধারণ নিয়ম আবিষ্কার করাই হল মনোবিদ্যার উদ্দেশ্য। মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি হল-


(১) অন্তদর্শন বা Introspection: মনোবিজ্ঞানের এটি একটি নিজস্ব পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে গবেষক নিজের মনের প্রক্রিয়াগুলিকে নিজেই নিরীক্ষণ করে চেতন মানসের ক্রিয়াকে বোঝার চেষ্টা করেন। ধরা যাক, আমি রাগের প্রকৃতিকে বুঝতে চাই। রাগের সময় আমার মানসিক অবস্থা কী হয় তার বিচারবিশ্লেষণ করলে রাগের স্বরূপটি বুঝতে পারব।

কিন্তু এই পদ্ধতির অনেকগুলি ত্রুটি আছে। প্রথমত, যখন কোনো মানসিক প্রক্রিয়া ঘটে ঠিক সেই সময়ে সেটিকে নিরীক্ষণ করা সম্ভব হয় না। নিরীক্ষণ করার চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে সেটি অদৃশ্য হয়ে যায়। তখন অন্তদর্শনের মধ্যে অনুমান ও কল্পনার প্রভাব এসে যায়। উইলিয়ম জেমসের ভাষায় অন্তদর্শনের চেষ্টা কতকটা ঘুরন্ত লাউর গতিকে ধরার মতো। আচরণবাদী মনোবিদরা অন্তদর্শনকে মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতি হিসাবে মানতে রাজি নন।

তা ছাড়া অন্তদর্শন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার, ব্যক্তিনির্ভর। অন্তদর্শন যতই ত্রুটিযুক্ত হোক না কেন, মনোবিজ্ঞানের অনুশীলন থেকে এই পদ্ধতিকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়।


(২) পর্যবেক্ষণ বা Observation: মনোবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হল পর্যবেক্ষণ। অন্যের আচরণ সতর্কতার সঙ্গে নিরীক্ষণ করে তার মনের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারি। রাগ হলে ব্যক্তির বাইরের আচরণগুলি থেকে বোঝা যায় সে রাগ করেছে বা রাগান্বিত।


(৩) পরীক্ষা বা Experiment: যন্ত্রপাতির সাহায্যে স্মৃতি, বুদ্ধি, মনোযোগ, প্রক্ষোভে, ব্যক্তিত্ব প্রভৃতি গুণগুলির পরিমাপ করা হয় পরীক্ষাগারে। জার্মান মনোবিদ ভুন্ড (Wundt) ১৮৭৯ সালে জার্মানির লাইপজিগ (Leipzig) বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানের চর্চার জন্য এক পরীক্ষাগার স্থাপন করেন।


(৪) পরিসংখ্যান বা Statistical Method: পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের সাহায্যে মানসিক প্রক্রিয়াকে বোঝার চেষ্টা হয়ে থাকে।


(৫) তুলনামূলক পদ্ধতি বা Comparative Method: মনোবিদগণ শুধু মানুষের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন তা নয়, তাঁরা প্রাণীর আচরণ লক্ষ করে তার সঙ্গে মানুষের আচরণ = তুলনা করেন। শিক্ষা, প্রবৃত্তি, প্রক্ষোভ, বুদ্ধি প্রভৃতির স্বরূপ জানবার জন্য প্রাণীর আচরণ পর্যবেক্ষণ করা হয়।


(৬) কেস হিস্ট্রি পদ্ধতি বা Case History Method: মনোবিকার ও অপরাধপ্রবণতার কারণ নির্ণয়ের জন্য শিশুর সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশের সংবাদ এই পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয়।


(৭) মন-সমীক্ষণ বা Psycho-Analysis: নানাবিধ মানসিক ব্যাধির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির প্রয়োগ হয়। ফ্রয়েড এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন।



মনোবিদ্যার বিভিন্ন শাখা:


মনোবিদ্যা হল ব্যক্তিবিশেষের অথবা সামাজিক গোষ্ঠীর স্বভাবী ব্যক্তির অথবা অস্বাভাবী ব্যক্তি বা মানুষের অথবা মনুষ্যেতর # প্রাণীর মানসিক অভিজ্ঞতা ও দৈহিক আচরণ সম্বন্ধে সুচিন্তিত ও সুসংবদ্ধ আলোচনা। মনোবিদ্যায় এই ব্যাপক ক্ষেত্রকে বিভিন্ন বিভাগে বা শাখায় বিন্যস্ত করা হয়। মনোবিদ্যার মূল শাখাগুলি হল -


(১) প্রাণী মনোবিদ্যা বা Animal Psychology: প্রাণী মনোবিদ্যার আলোচ্য বিষয় হল মনুষ্যেতর প্রাণীর মন ও তার বিভিন্ন প্রকাশ। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রাণীর আচরণ অনুশীলন করাই হল এই শাখার উদ্দেশ্য। প্রাণীরা মনের ভাব কথায় প্রকাশ করতে পারে না। এইজন্য বিষয়গত পদ্ধতির মাধ্যমে কৃত্রিম ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে প্রাণীর আচরণ পর্যবেক্ষণ করে সেসবের অর্থ করতে হয়, এখানে মনোবিদগণ জানতে চান - প্রাণীর আচরণ যান্ত্রিক অথবা উদ্দেশ্যমূলক। উদ্দেশ্যমূলক হলে প্রাণীকে আর বুদ্ধিহীন জীব বলা যাবে না, কেন-না উদ্দেশ্যমূলক আচরণের মাধ্যমেই বুদ্ধির প্রকাশ ঘটে।


প্রাণী মনোবিদ্যার মুখ্য আলোচ্য বিষয়গুলি হল-

(i) প্রাণী সহজ প্রবৃত্তি,

(ii) প্রাণীর বুদ্ধি, সামর্থ্য,

(iii) প্রাণীর শিক্ষণ পদ্ধতি,

(iv) বিভিন্ন প্রাণীর ব্যবহারের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা,

(v) উন্নত প্রাণীর আচরণের সঙ্গে মানবশিশুর আচরণের তুলনামূলক আলোচনা।


প্রাণী মনোবিদ্যায় শিক্ষণ সংক্রান্ত আলোচনা অতি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণীর শিক্ষণ বুদ্ধিলদ্ধ কি না, আমেরিকার মনোবিদ থর্নডাইক, জার্মান মনোবিদ কোহেলার প্রমুখ প্রাণীদের শিক্ষণ সম্পর্কে মূল্যবান অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করেন। ধর্নডাইকের মতে, উচ্চতর প্রাণী যেমন - কুকুর, বিড়াল যান্ত্রিকভাবে, প্রচেষ্টা ও ভুল সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষালাভ করে। কোহেলারের মতে, প্রাণীদের শিক্ষার মূলে হচ্ছে অন্তদৃষ্টি বা পরিজ্ঞান।


(২) শিশু মনোবিদ্যা বা Child Psychology: শিশু মনোবিদ্যার আলোচ্য বিষয় হল শিশুর মন জন্ম থেকে কৈশোর পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান শিশুমন। মনোবিদ্যায় শিশুমনের আলোচনার গুরুত্ব অপরিসীম, কেন-না শিশুমনের ক্রমবিকাশই হচ্ছে পরিণত মন বা বয়স্কদের মন।

পরিণত মনের জ্ঞানলাভের জন্য এ কারণে শিশুমনের জ্ঞানলাভ একান্ত আবশ্যক। শিশুমনের সঙ্গে পরিণত মনের তুলনা করেই মনের ক্রমবিকাশ ও ক্রম পরিণতি সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব হয়। শিশুমন সম্পর্কে জ্ঞানসদয় সহজসাধ্য নয়। এখানে শিশুর আচরণের পর্যবেক্ষণ একমাত্র অবলম্বনীয় পদ্ধতি।


শিশু মনোবিদ্যার আলোচ্য বিষয়গুলি হল-

(i) শিশুমনের ক্রমবিকাশ,

(ii) শিশুর জীবনে বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব,

(iii) শিশুর সহজ প্রবৃত্তি এবং অভিজ্ঞতার দ্বারা তাদের পরিবর্তন সাধন,

(iv) শিশুর জীবনে কল্পনা, অনুভূতি ও আবেগ প্রভৃতির স্থান,

(v) শিশুর জীবনে বুদ্ধির বিকাশ,

(vi) শিশুর শিক্ষণ পদ্ধতি,

(vii) শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার উপায় নির্ধারণ,

(viii) অপরাধপ্রবণ, স্বপ্নবুদ্ধি শিশুদের নিয়ে যেসব সমস্যা দেখা দেয় তাদের সমাধানের পথনির্দেশ,

(ix) প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষা প্রভৃতি।

শিশু মনোবিদ্যায় যাদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তারা হলেন স্ট্যানলি হল (stanley Hall), ওয়াটসন (Watson), পিঁয়াজে (Piaget), ফ্রয়েড (Freud) প্রমুখ ব্যক্তি।


(৩) পরীক্ষণমূলক মনোবিদ্যা বা Experimental Psychology: মনোবিদ্যায় যে শাখা কৃত্রিম পরিবেশে মানসিক অবস্থাকে উৎপন্ন করে তাদের স্বরূপ নির্ণয়ের চেষ্টা করে তাকে পরীক্ষণমূলক মনোবিদ্যা বলে। সাম্প্রতিককালে মনোবিদ্যার প্রায় সকল শাখাই পরীক্ষণমূলক মনোবিদ্যার ওপর কমবেশি নির্ভরশীল। পরীক্ষণমূলক মনোবিদ্যায় অন্তদর্শন ও বাহ্যদর্শন উভয় পদ্ধতিকেই গ্রহণ করা হয়। পরীক্ষণমূলক মনোবিদ্যায় কোনো মানসবৃত্তীয় স্বরূপ উদ্‌ঘাটনের জন্য অন্ততপক্ষে দুজন ব্যক্তির প্রয়োজন হয় পাত্র বা Subject এবং পরীক্ষক বা Experimentes।


সুনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরীক্ষক পাত্রের মনে কোনো মানসবৃত্তি যথা– ভয়, রাগ উৎপন্ন করেন। পাত্র তার অন্তর্দর্শনের মাধ্যমে মানসবৃত্তির বিবরণ দেয়, পরীক্ষক ওই মানসবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ পর্যবেক্ষণ করেন। এইভাবে যুগ্ম পদ্ধতির সাহায্যে কৃত্রিম পরিবেশে উৎপন্ন কোনো মানসবৃত্তির সম্পূর্ণ স্বরূপটি জানা যায়। পরীক্ষণমূলক মনোবিদ্যায় যাদের নাম উল্লেখযোগ্য তারা হলেন জার্মান শারীরতাত্ত্বিক হুেবার (Weber), পদার্থবিদ ফেকনার (Fechner), আমেরিকার মনোবিদ ওয়াটসন (Watson), প্রমুখ।


(৪) শারীরবৃত্তীয় মনোবিদ্যা বা Physiological Psychology: শরীরতত্ত্বে সমগ্র দেহই আলোচ্য বিষয়, শারীরবৃত্তীয় মনোবিদ্যায় শরীরের একটি বিশেষ অংশ স্নায়ুতন্ত্র আলোচিত হয়। মনোবিদ্যার যে শাখা দেহের সেইসব অংশের গঠন, ক্রিয়া প্রভৃতি আলোচনা করে, যার সঙ্গে বিভিন্ন মানববৃত্তির সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ যা মনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করে, তাকে বলে শারীরবৃত্তীয় মনোবিদ্যা।


শারীরবৃত্তীয় মনোবিদ্যায় আলোচ্য বিষয় হল স্নায়ুতন্ত্র। স্নায়ুতন্ত্রের তিনটি বিভাগ- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র, স্বতঃক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র।


শারীরবৃত্তীয় মনোবিদ্যা দেহের যেসব অংশের গঠন ও ক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করে। মনোবিদ্যার এই শাখায় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাম হল গাল ফ্লোরেন্স (Gall Flourens), রোনাল্ডো (Ronaldo), হেলম্‌হজ (Helmholtz) প্রমুখ মনোবিদগণ।


(৫) শিক্ষা-মনোবিদ্যা বা Educational Psychology: মনোবিদ্যার যে শাখা শিখন সামর্থ্য, শিক্ষণ পদ্ধতি, আচরণের ওপর শিক্ষার প্রভাব ইত্যাদি নিরুপণের চেষ্টা করে তাকে শিক্ষা মনোবিদ্যা বলে। শিক্ষা-মনোবিদ্যা বিশেষ করে শিশু ও কিশোরদের অপরিণত বয়স্ক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাকেই আলোচ্য বিষয়রূপে গ্রহণ করে।


শিক্ষা-মনোবিদ্যার মুখ্য আলোচ্য বিষয়বস্তু হল-


(i) শিশু-শিক্ষার্থীর শিক্ষণ সামর্থ্য কতটা।

(ii) কোন্ পদ্ধতিতে শিশু-শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দিলে তা সহজ ও সার্থক হতে পারে।

(iii) শিক্ষার দ্বারা শিক্ষার্থীর আচরণের কীরূপ পার্থক্য ঘটে।

(iv) বুদ্ধির ওপর শিক্ষণ কতটা নির্ভর করে।

(v) শিক্ষান্তে শিক্ষার্থী কোন্ বৃত্তির যোগ্যরূপে বিবেচিত হতে পারে ইত্যাদি।


শিক্ষা-মনোবিদ্যার প্রধান কাজ হল শিক্ষণের মুলনীতি ও আদর্শ


পদ্ধতি নির্ধারণ করে এবং তাদের সঠিকভাবে প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীর জীবনের উন্নতিসাধন করা। মনোবিদ্যার এই শাখায় উল্লেখযোগ্য নাম হল - বিনে (Binet), - এবিং হাউস (Ebbing Haus), গ্যালটন (Galton), সিরিল বার্ট (Cyril Burt), প্রমুখ।


(৬) শিল্পীয় মনোবিদ্যা বা Industrial Psychology: মনোবিদ্যার যে শাখা শিল্প উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মানসিক অবস্থা, চাহিদা, আচরণ, পারস্পরিক সম্পর্ক ও তাদের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে তাকে বলে শিল্পীয় মনোবিদ্যা।


মানুষই যন্ত্রচালনা করে শিল্প উৎপাদন করে। এইজন্য শিল্প উৎপাদন করতে হলে উৎপাদনের বৃদ্ধি ঘটাতে হলে, উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত কর্মী ও শ্রমিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, যোগ্যতা ইত্যাদি সম্পর্কেও অবহিত হতে হয়।

কর্মী ও শ্রমিকের কর্মদক্ষতা হ্রাস পেলে উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে না। কর্মদক্ষতা নানাপ্রকার দৈহিক অবস্থা এবং বিশেষ করে মানসিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। শিল্পীয় মনোবিদ্যা এসব দৈহিক ও মানসিক অবস্থা বা শর্তগুলি নির্ণয় করে উৎপাদন সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পথনির্দেশ করে। মনোবিদ্যার এই শাখায় উল্লেখযোগ্য নামগুলি হল মায়ার্স (Myers), টেলার ও গিলব্রেথ (Taylor and Gilbreth), কুলপিন (Culpin), স্মিথ (Smith)।


(৭) সমাজ মনোবিদ্যা বা Social Psychology: মানুষ সামাজিক জীব। বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্ক নিয়েই মানুষের জীবন। প্রতিটি সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের চিন্তাধারা, ইচ্ছা ও আচরণ এজন্য সমাজের অপরাপর ব্যক্তির চিন্তা, ইচ্ছা ও আচরণের দ্বারা কিছু না কিছু প্রভাবিত হয়।

মনোবিদ্যার যে শাখা ও সমাজ ব্যক্তিমনের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে বলে সমাজ মনোবিদ্যা। পরিবার, বিভিন্ন দল উপদল, সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সম্প্রদায় প্রভৃতির অন্তর্গত ব্যক্তিদের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং তাদের চিন্তা ও আচরণের মধ্যে সেসবের প্রভাব কীরূপ তা নির্ণয় করাই হচ্ছে সমাজ মনোবিদ্যার অন্যতম কাজ।

সমাজ মনোবিদ্যা সামাজিক ব্যাধি যথা- দারিদ্র্য, অপরাধ ইত্যাদি সম্পর্কেও আলোচনা করে এবং সেইসব কারণ নির্ণয় করে প্রতিকারের উপায় নির্ধারণ করে।


মনোবিদ্যার এই শাখায় আলোচ্য বিষয়গুলি হল-

(i) জনতার মনস্তত্ত্ব,

(ii) নেতা ও নেতৃত্ব,

(iii) জনমতের বৈশিষ্ট্য,

(iv) জনমত পরিমাপ,

(v) অন্তঃগোষ্ঠী ও বহিঃগোষ্ঠীর মনোভাব,

(vi) সামাজিক অপরাধের কারণ ও প্রতিকারের উপায় নির্ধারণ ইত্যাদি।


সমাজ মনোবিদ্যার উল্লেখযোগ্য নামগুলি হল, হার্বার্ট স্পেনসার (Herbert Spencer), ম্যাকডুগাল (Mc Dougall), অলপোর্ট (Allport) প্রভৃতি।


(৮) অস্বভাবী মনোবিদ্যা বা Abnormal Psychology: মনোবিদ্যার যে শাখা অস্বভাবী মনের ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মতভাবে আলোচনা করে তাকে বলে অস্বভাবী মনোবিদ্যা। অস্বভাবী বলতে বোঝায় যারা স্বভাবী বা স্বাভাবিক নয়। সমাজের অধিকাংশের অর্থাৎ শতকরা ৫০ জনের বেশিসং খ্যক ব্যক্তিমন যেভাবে প্রকাশ পায়, তাকেই বলা হয় স্বাভাবিক না মনের প্রকাশ। তাহলে অস্বভাবী ব্যক্তি কথাটির মানে হবে: এমন সব ব্যক্তি যাদের আচার-আচরণ সমাজের অন্তত শতকরা ৫০ ভাগ লোকের আচার-আচরণের সঙ্গে মেলে না।


মনোবিদ্যায় অস্বভাবী' বলতে বোঝায় সেইসব ব্যক্তিদের যাদের- আচার-আচরণ অধিকাংশের আচার-আচরণ থেকে ভিন্ন এবং যাদের আচার-আচরণ সামাজিক অনেক সমস্যার কারণ হয়। - প্রতিভাশালী ব্যক্তিরা সমাজের অধিকাংশ লোক থেকে ভিন্ন প্রকৃতির হলেও সমাজ তাদের সম্পদরূপে গণ্য করে। মানসিক রোগগ্রস্ত, বাতিকগ্রস্ত, মুদ্রাদোষযুক্ত ব্যক্তিদেরই মনোবিদ্যায় অস্বভাবী বলা হয়।

অস্বভাবী মনোবিদ্যায় মানসিক রোগ, বিকার, বাতিক, মুদ্রাদোষ ইত্যাদি কারণ নির্ণয় করে ব্যক্তিকে রোগমুক্ত বা দোষমুক্ত করার উপায় নির্ধারণ করা হয়। অস্বভাবী মনোবিদ্যার মুখ্য কাজ হল স্বপ্ন বিশ্লেষণ, মনোসমীক্ষণ প্রভৃতি পদ্ধতির দ্বারা মনোরোগের কারণ নির্ণয় করে রোগ নিরাময় চরং করা। -এই শাখায় উল্লেখযোগ্য নাম হল ফ্রয়েড (Freud), মর্টন প্রিন্স। (Morton Prince), ম্যাকডুগাল (Mc Dougall) প্রমুখ।


(৯) প্রাণী মনোবিদ্যা বা Animal Psychology: প্রাণী পদন মনোবিদ্যা হল মনোবিদ্যার সেই শাখা যা মনুষ্যেতর প্রাণীদের মন নিয়ে আলোচনা করে। কুকুর, বাঁদর, বিড়াল প্রভৃতি জীবজন্তুদের মানসিক প্রক্রিয়া তাদের বাহ্য আচরণের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেই আচরণ লক্ষ করে প্রাণী মনের স্বরূপ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করাই প্রাণী মনোবিদ্যার উদ্দেশ্য।


প্রাণীমন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করার জন্য এবং বিভিন্ন প্রাণী মনকে তুলনামূলক আলোচনা করার জন্য যেমন প্রাণী মনোবিদ্যা সহায়তা করে, তেমনি অপরদিকে সুস্থ স্বাভাবিক ও পরিণত বয়স্ক মনের বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে প্রাণী মনোবিদ্যা সহায়তা করে। তা ছাড়া মনের ক্রমবৃদ্ধি কীভাবে ঘটেছে, সরল অবস্থা থেকে জটিল অবস্থায় মনের ক্রমবিকাশ কীভাবে হয়েছে সেই বিষয়ে জ্ঞানলাভ করতে প্রাণী মনোবিদ্যা সহায়তা করে।


(১০) সমাজ মনোবিদ্যা বা Social Psychology: সমাজ মনোবিদ্যার আলোচ্য বিষয় ব্যক্তিমন নয়, সমাজের মাধ্যমে প্রকাশিত সমাজ মন বা গোষ্ঠীমন। মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক সম্পর্কের মাধ্যমেই মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ।

সামাজিক জীব হিসাবে মানুষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সভ্য। ভিন্ন ভিন্ন ভাব ও ধারণার অধিকারী হয়েও মানুষ কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের সভ্যরূপে কোনো জাতির নাগরিক হিসাবে কীভাবে সুখেশান্তিতে একত্রে বাস করতে পারে। সমাজের সম্পর্কের পেছনে যেসব মনস্তাত্ত্বিক উপাদান আছে, সামাজিক অনুষ্ঠানের অন্তরালে সেই সব নীতি কার্য করে, সেইগুলি আলোচনা করা সমাজ মনোবিদ্যার কাজ। সমাজ মনোবিজ্ঞান সামাজিক আচার ব্যবহার, রীতিনীতি, সংস্কার, রুচি প্রভৃতি মনস্তাত্ত্বিক উপাদান সম্পর্কেও আলোচনা করে।


(১১) লোক মনোবিজ্ঞান বা Folk Psychology: এটি সমাজ মনোবিদ্যার অন্যতম শাখা। এই শাখা বিশেষ করে আদিম মানুষের মানসিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে।


(১২) পরা মনোবিজ্ঞান বা Para Psychology: এমন অনেক মানসিক ঘটনা আছে যেগুলিকে মনোবিদ্যার কোনো সাধারণ সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায় না। এইসব মানসিক শক্তি সম্বন্ধীয় এবং এই ধরনের মানসিক শক্তি দেহ ব্যতিরেকেই ক্রিয়া করে।

এই জাতীয় মানসিক শক্তির স্বরূপ ও ক্রিয়াপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে পরা মনোবিদ্যা। যেমন অলৌকিক প্রত্যক্ষ দূরবেক্ষণ বা দুরদর্শন অলৌকিক প্রত্যক্ষের উদাহরণ। আবার ইন্দ্রিয়ের সাহায্য গ্রহণ করে অপরের মানসিক অবস্থাকে জানা হল Telepathy। অনেক ব্যক্তি চোখ বন্ধ করে জনবহুল রাস্তায় সাইকেল চালাতে পারেন। পরা মনোবিজ্ঞান নিয়ে যিনি গবেষণা করছেন তিনি হলেন আমেরিকার মনোবিদ Dr. J. B. Rhine।

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area