Ads Area


আকবরের মালিক অম্বরের কৃতিত্ব আলোচনা করো - Discuss the achieve ments of Malik Amber Akbar

আকবরের মালিক অম্বরের কৃতিত্ব আলোচনা করো - Discuss the achieve ments of Malik Amber Akbar


আকবরের মালিক অম্বরের কৃতিত্ব আলোচনা করো - Discuss the achieve ments of Malik Amber Akbar


প্রশ্ন। আকবরের মালিক অম্বরের কৃতিত্ব আলোচনা করো। (Discuss the achieve ments of Malik Amber Akbar.)


উত্তর-

সম্রাট আকবরের আমলে দক্ষিণ ভারতের কিয়দংশ মুঘলদের অধীনে এসেছিল। জাহাঙ্গীর বাকি অংশে মুঘল- আধিপত্য স্থাপনের কর্মসূচি নেন। কিন্তু সেই সময় পতনোন্মুখ দাক্ষিণাত্যের রাজ্যগুলি মালিক অম্বর নামক জনৈক ব্যক্তির নেতৃত্বে পুনরায় প্রাণশক্তি ফিরে পেতে শুরু করে।


বাল্যজীবন:

আকবর আহম্মদনগরের অধিকাংশই দখল করেছিলেন। সেখানকার সুলতান নিজাম শাহ্ ছিলেন মুঘলদের বন্দি। এই বিপর্যয়কর মুহূর্তে মালিক অম্বর তাঁর ব্যক্তিগত দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা এবং কঠোর শ্রম দ্বারা ধ্বংসোন্মুখ আহম্মদনগর রাজ্যকে অন্তত কিছুকালের জন্য ইতিহাসের পৃষ্ঠায় জীবিত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। সম্ভবত আবিসিনিয়ায় তাঁর জন্ম হয়। তারপর ক্রীতদাস রূপে তিনি ভারতে আসেন।

অতঃপর আহম্মদনগর ও বিজাপুর সুলতানদ্বয়ের অধীনে কিছুকাল চাকুরি করেন। আহম্মদনগরে চাঁদ সুলতানা-বিরোধী যে হাবশিগোষ্ঠী ছিল, মালিক অম্বর ছিলেন সেই দলের সদস্য। চাঁদ সুলতানার মৃত্যুর পর তাঁর গুরুত্ব বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত তিনি আহম্মদনগরের সুলতান মূর্তজা আলি শাহের উজীর বা প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।


সংস্কার কর্মসূচি:

মালিক অম্বরের লক্ষ্য ছিল আহম্মদনগরকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা এবং মুঘলদের কাছ থেকে হৃত রাজ্যাংশ পুনর্দখল করা। আহম্মদনগরকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য তিনি নানাবিধ সংস্কার প্রবর্তন করেন। তিনি টোডরমলের ‘জাবতি’ প্রথা অনুসারে আহম্মদনগরের ভূমিরাজস্ব নির্ধারণ করেন। সরকারি কর্মচারীদের উপর কঠোর শৃঙ্খলা আরোপ করেন এবং বিচারব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ ও ন্যায়মুখী করে তোলেন। অভ্যন্তরীণ সংস্কারের পাশাপাশি তিনি সামরিকবাহিনীকেও সুসংগঠিত করেন।

বিচক্ষণ মালিক অম্বর বুঝেছিলেন যে, বিশাল মুঘলবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে কখনোই আহম্মদনগরের ক্ষুদ্র বাহিনী সফল হতে পারবে না। তাই তিনি আহম্মদনগরের ক্ষুদ্র সেনাবাহিনীতে অধিকসংখ্যক মারাঠা নিযুক্ত করেন এবং তাদের গেরিলা-যুদ্ধপদ্ধতিতে পারদর্শী করে তোলেন। ঈশ্বরীপ্রসাদের মতে, “মালিক অম্বরই মারাঠাদের গেরিলা যুদ্ধপদ্ধতির পথপ্রদর্শক।” রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মালিক অম্বর রাজনৈতিক কূটচালেরও আশ্রয় নেন।

দাক্ষিণাত্যের অন্যান্য রাজ্যগুলির সাথে যুক্ত হয়ে তিনি মুঘলবিরোধী অভিযানে নিজ হাতকে শক্তিশালী করেন।


রাজনৈতিক দক্ষতা:

আকবরের জীবিতাবস্থাতেই মালিক অম্বরের উত্থান ঘটেছিল। কিন্তু তখন তিনি শক্তি-সঞ্চয়ে ব্যক্ত ছিলেন। আকবরের মৃত্যুর পর দাক্ষিণাত্যে নিযুক্ত মুঘল সেনাপতিদের মনোমালিন্যের সুযোগে তিনি তাদের বিতাড়িত করতে উদ্যোগী হন। ১৬১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই তিনি মুঘলদের একাধিক অভিযান ব্যর্থ করে আহম্মদনগরের বহু রাজ্যাংশ পুনর্দখল করেন। এরপর ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দে খুম -এর নেতৃত্বে বিরাট মুঘলবাহিনী দাক্ষিণাত্য অভিযান করে এবং মালিক অম্বরের নেতৃত্বাধীনে দাক্ষিণাত্য বাহিনীকে পরাস্ত করে। তিনি মুঘলদের সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হন।

কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই সন্ধি ভঙ্গ করে তিনি আহম্মদনগর দুর্গ অবরোধ করেন। এবারেও তিনি পরাজিত হন। যাই হোক, অতঃপর মুঘল দরবারের রাজনীতি ও যুবরাজ খুমের বিদ্রোহজনিত কারণে মুঘল আক্রমণ কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। এই সুযোগে মালিক অম্বর নিজ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। কিন্তু তাঁর আত্মম্ভরিতা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং কিছু কিছু হঠকারী ও আত্মহননকারী সিদ্ধান্ত নিতে থাকেন। 

ফলে তাঁর ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। অবশ্য শেষ মুহূর্তেও তিনি আহম্মদনগরের কয়েকটি স্থান দখল করতে সক্ষম হন। ১৬২৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা যান। এইভাবে সামান্য ভাগ্যান্বেষী ক্রীতদাস থেকে নিজ দক্ষতাবলে মালিক অম্বর আহম্মদনগরের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এবং প্রকৃত দেশপ্রেমিকের মতোই নিজ রাজ্যের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতি প্রবর্তনের চেষ্টা করেন। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, সুদক্ষ প্রশাসক, অসমসাহসী যোদ্ধা, বিচক্ষণ রাষ্ট্রনীতিবিদ ও সংস্কারক মালিক অম্বর ছিলেন সপ্তদশ শতকের ভারত-ইতিহাসের এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব।
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area